স্বামীনহ তিন সতিনে মিলে স্ত্রীকে নির্যাতনের অভিযোগ

এ এস এম জসিম
এ এস এম জসিম, বার্তা সম্পাদক
প্রকাশিত: ১১:১৭ পিএম, ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০১৮ | আপডেট: ০৫:২১ পিএম, ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০১৮

---

পাথরঘাটা নিউজ ডেস্কঃ

চতুর্থ স্ত্রীকে জানালার কাঁচ ভেঙে সারা শরীর কেটে ক্ষত-বিক্ষত করে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়ার অভিযোগ ওঠেছে স্বামীসহ তিন সতিনের বিরুদ্ধে।

আহত গৃহবধূকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেছে।

আহত গৃহবধূ রুনা আকতার (২৫) আমতলী উপজেলার চিলা গ্রামের দাউদুর রহমান আকনের একমাত্র মেয়ে।

গত সোমবার রাতে কলাপাড়া পৌর শহরের মাদ্রাসা সড়কে এ ঘটনা ঘটেছে। এর আগে রোববার রাতে আহত রুনা স্বামীর কাছে বাবার বাড়ি থেকে এনে দেয়া টাকা ফেরত চায়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে রুনাকে বেধরক মারধর করে।

পারিবারিক সূত্র জানায়, কলাপাড়া পৌর শহরের মাদ্রাসা সড়কের জলিল ব্যাপারীর ছেলে মনির ব্যাপারী (৫০) তিন স্ত্রীর কথা গোপন রেখে ২০১৪ সালে আমতলী উপজেলার চিলা গ্রামের দাউদুর রহমান আকনের একমাত্র মেয়ে রুনা আকতারকে বিয়ে করেন। বিয়ের সময় জামাতাকে গয়নাসহ সাংসারিক প্রয়োজনীয় মালামাল দিয়ে দেন।

গত বছর জুন মাসে ব্যবসা করবে বলে জামাতা মনির ব্যাপারী স্ত্রী রুনাকে তার বাবার বাড়ি থেকে দুই লক্ষ টাকা এনে দিতে বলেন। রুনার বাবা দাউদুর রহমান মেয়ের সুখের কথা ভেবে জমি বন্ধক রেখে জামাতাকে এক লক্ষ ৬০ হাজার ৫০০ টাকা দেন। ওই টাকা নেয়ার পরে মনির ব্যাপারী তার প্রথম স্ত্রী মিলি বেগম, দ্বিতীয় স্ত্রী শাফিয়া বেগম ও তৃতীয় স্ত্রী সাবানাকে বাড়িতে আনেন। তিন স্ত্রীকে বাড়িতে আনার পরে শুরু করে রুনার ওপর অমানুষিক নির্যাতন।

এরই ধারাবাহিকতায় স্বামী ও তিন সতিন প্রায়ই রুনাকে বাবার বাড়ি থেকে টাকা আনার জন্য নির্যাতন করে আসছিলেন। সোমবার বিকালে এ নিয়ে স্বামী মনিরের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়।

পরে স্বামী মনির ব্যাপারী ও তার তিন সতিন মিলি, শাফিয়া, সাবানা, প্রথম সতিনের ছেলে রুপক, রাজু ও মেয়ে মৌ আকতার মিলে রুনা বেগমকে ঘরের মধ্যে আটকে ঘরের জানালার গ্লাস ভেঙ্গে শরীরের বিভিন্ন স্থানে কেটে ক্ষত-বিক্ষত করে ঘর থেকে তাড়িয়ে দেয়। পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় আহত অবস্থায় রুনা বাবার বাড়িতে ফিরে আসেন। সোমবার রাতে রুনাকে আমতলী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।

আমতলী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার মো. হারুন অর রশিদ বলেন, রুনার শরীরে ধারাল অস্ত্রের আঘাতের চিহৃ রয়েছে।

মঙ্গলবার আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা গেছে, রুনা বেগমের দুপা, দুহাত, পিঠ ও ঘাড়ের বিভিন্ন স্থানে ধারাল অস্ত্রের আঘাতের চিহৃ রয়েছে। শরীরের বেধরক যন্ত্রণায় রুনা কাতরাচ্ছেন।

আহত রুনা বেগম কান্নাজনিত কণ্ঠে বলেন, তাদে মারধরে দুবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছি। স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় আমি প্রাণে বেঁচে আছি।

আহত রুনার মা মরিয়ম বেগম বলেন, “মোর মাইয়্যারে এইভাবে য্যারা মারছে মুই হ্যাগো বিচার চাই। এই রহম কোন মানুরে কেউ মারে। আমার মাইয়্যাডারে ওরা মাইর‌্যা ফালাইতো, আল্লায় রহমাত হরচে”।

স্বামী মনির ব্যাপারী মারধরের কথা স্বীকার করে বলেন, সাংসারিক ঝগড়া ঝাঁটিতে একটু ঘটনা ঘটেছে, আবার ঠিক হয়ে যাবে। আগের তিন স্ত্রীর কথা গোপন রেখে রুনাকে কেনো বিয়ে করলেন এমন প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যান।

আমতলী থানার ওসি মো. সহিদ উল্যাহ বলেন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে খোঁজখবর নিচ্ছে পুলিশ। অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)