ফুলের মতো পাপড়িতে ঢাকা থাকুক নারী

ডেস্ক নিউজ
ডেস্ক নিউজ,
প্রকাশিত: ১১:০৩ এএম, ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০১৮

হিজাব ও নারী
ইসলামিক ডেস্কঃ নারী জাতির ইজ্জতের সম্মানার্থে, নিজেকে রক্ষার জন্য আল্লাহতায়ালা কোরআনুল কারিমে বলেন, হে নারী সমাজ, তোমরা নিজগৃহে অবস্থান করবে এবং বর্বর জাহেলিযুগের নারীদের মতো নিজেদের প্রদর্শন করে বেড়াবে না। [সূরা আহযাব : ৩৩]

উলঙ্গপনা যদি আধুনিকতা হতো, তবে বন্য প্রাণীরা হতো সবচেয়ে আধুনিক; অথচ সবাইকে একদিন মৃত্যু পথের পথিক হতে হবে। আমাদের ছোট বড় সব কাজের হিসাব সূক্ষ্মভাবে লিপিবদ্ধ হচ্ছে, তা প্রতিনিয়ত স্মরণ রাখা উচিত। আমরা জীবনের সময়কে খুব অবহেলায় কাটিয়ে দিই হেলা-ফেলায়। চিন্তা করে দেখি না, কত মূল্যবান সময় চলে যাচ্ছে আমাদের জীবন থেকে।

মানুষ সময় এবং মৃত্যু শব্দটির সঙ্গে অপরিচিত হয়ে যাচ্ছে। মহিলারা লাশ বহনকারী খাটিয়া দেখে মাথায় কাপড় তোলেন, চোখের আড়াল হলেই কাপড় ফেলে দেন। আরও কতগুলো শিক্ষিত অত্যাধুনিক মহিলা আছেন যারা আমাদের বন্য প্রাণীকেও হার মানিয়ে দিয়েছেন পোশাকে। যাদের দেখলে প্রকৃত শিক্ষিত পুরুষ সমাজের, কোনো কোনো পুরুষকে বলতে শোনা যায়, আপা আপনাকে দেখে অনেকে লজ্জা করে মাথায় কাপড় দেন। তাই সেদিন একজন আপা অল্প বয়সে হজ করে এসেছেন আগে পর্দা করেননি এখন পর্দা করতে গিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়েছেন কেমন করে পর্দা করবেন। কতটুকু ঢেকে চললে প্রকৃত পর্দা হবে এবং পর্দার জন্য কটাক্ষ দেখতে হবে কতটুকু। এসব চিন্তাভাবনা, করতে করতে মোটামুটি বোরকা পরা আরম্ভ করেছেন।

কেমন করলে নিজেকে পর্দায় মানিয়ে নিতে পারবেন চিন্তিত হয়ে বসে আছেন, বললাম পর্দা আরম্ভ করুন, এতটুকু করেছেন ইনশাআল্লাহ বাকিটুকু পারবেন। কিছু কিছু আপা, খালারা বলেছেন, আগে খুব পর্দা করতাম, ধর্মকর্ম করতাম। বিয়ের পর স্বামীর বাড়িতে সবার সঙ্গে মানিয়ে নিতে বোরকা ছেড়েছি, হিজাব ছেড়েছি। কোনো অনুষ্ঠানে গেলে পরিচিতজনরা মুখ থেকে হিজাব কেড়ে নিয়ে বলে পর্দা করা লাগবে না। কিছু আধুনিক পর্দাকারী আপাদের সাক্ষাৎ পেলাম। তারা পর্দা করেছেন; কিন্তু আধুনিকতার সঙ্গে লিপস্টিক লাগিয়ে, ভ্রু প্লাক করে বিভিন্ন রঙের প্রসাধনে চোখ সাজিয়ে এসেছেন। এটি পর্দা প্রথার আরও অপমানজনক একটি বিব্রতকর অবস্থা। হজ করা আপার সঙ্গে শেষ কথা হল।

হজ করে এসেও অনেকে কিছু ভুল করছেন, পুরনো অভ্যাস ছাড়তে রাজি নন, কোরআনে এমনও আয়াত রয়েছে, এরপর তোমাদের হৃদয় কঠিন হয়ে গেল। তখন তা পাথরগুলোর মতো হয়, বরং তদপেক্ষা কঠিনতর এবং পাথরগুলোর মধ্যে তো কিছু এমনও আছে, যেগুলো থেকে নদীগুলো প্রবাহিত এবং কতক এমনও রয়েছে যেগুলো ফেটে যায়, তখন সেগুলো থেকে পানি বের হয় এবং কতেক এমনও আছে যেগুলো আল্লাহর ভয়ে গড়িয়ে পড়ে এবং আল্লাহ তোমাদের কৃতকর্মগুলো সম্পর্কে অনবহিত নন, (সূরা বাকারা-৭৪), জড় ও কঠিন পদার্থ পাথরের মধ্যেও অনুভূতি উপলব্ধি শক্তি রয়েছে। যদিও আমরা তা অনুভব করতে পারি না। যেমন কোরআনে এরশাদ হয়েছে প্রত্যেক সৃষ্ট বস্তু আল্লাহর গুণগান সহকারে তাসবিহ পাঠ করে; কিন্তু তোমরা অনুধাবন করতে পার না, যেমন, নবীজি (সা.) এর বিচ্ছেদে ক্রন্দনকারী শুষ্ক খেজুর শাখার আওয়াজ মসজিদে নববীতে উপস্থিত সাহাবায়ে কেরাম শুনতে পেয়েছেন। আবু জাহেলের হাতের মুষ্টির মধ্যে আবদ্ধ কঙ্করের কলেমা পড়ার শব্দ আবু জাহেল নিজেও শুনতে পেয়েছে, এসব আয়াত, এমন সব কথা বা ঘটনাকে কেন্দ্র করে নাজিল হয়েছিল।

আল্লাহর কুদরতের নিদর্শনস্বরূপ এসব ঘটনা শ্রবণ করেও তোমাদের হৃদয় পাষাণ কঠিন হয়ে গেল। হজ অনেক কষ্টের এবং মূল্যবান প্রাপ্তির একটা বিশেষ অংশ। হজ করে এসেও মহিলারা বুঝে ও এর সঠিক মর্যাদা দিতে পারছেন না। কারণ তারা বুঝে-জেনে, স্বীকার করেও আমল করে না। যদি আধুনিকতা নষ্ট হয়ে যায়, এটাই হচ্ছে বদ নসিবের লক্ষণ। সুতরাং যাকে আল্লাহতায়ালা পছন্দ করেন আর যাকে পছন্দ করেন না, তারা কি সমান? আপনার হেদায়াতের আলোতে আপনার অন্তরকে আলোকিত করেছেন তাই আপনি মোমিন। যে আয়াতকে জেনে আমল করার তৌফিক পেয়েছেন এর জন্য চাই সাধনা এবং সর্বোপরি দৃঢ়প্রত্যয়। নামাজ ও পর্দা করা জরুরি। নামাজের কাজা আছে; কিন্তু পর্দার কোনো কাজা নেই। যেহেতু যে সময়টুকু আপনি পর্দা করেননি, সেই সময়টা ফেরত পাবেন না। তার জন্য নির্ধারিত শাস্তি ভোগ করতে হবে।

নামাজ যে সময় পড়া হয়নি তার ব্যবস্থা আল্লাহতায়ালা করেছেন কাজা শব্দ দিয়ে। এক ওয়াক্ত নামাজ ফজর না পড়লে তা জোহরের আগে আগে পড়লে মহান আল্লাহতায়ালা তা ক্ষমা করবেন। কিন্তু আজ যে পর্দাহীন বের হলেন কাল সে সময়টা কি করে ফেরত পাবেন? পর্দার ফ্যাশন করার জন্য পার্লারে গিয়ে হিজাব বাঁধে।

তারপরও মহিলারা চোখের ভ্রু প্লাক করছে, সুশ্রী কালো চুলকে বিভিন্ন রঙে কালার করছে, আবার কালো চুলে সাদা বের হলেই কালো করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন; একটিবারের জন্য ভেবে দেখুন আপনার কিশোরী মেয়েটির যদি সাদা চুল বের হতো ক্যামন দেখাত? নারীকুল প্রকৃতি প্রদত্ত সুন্দর ও আকর্ষণীয়। তাদের সৌন্দর্যবর্ধনের নামে পার্লারে গিয়ে অপব্যয় করে সুখ দেখানোর কী প্রয়োজন? হে আল্লাহ আমাদের এসব থেকে রক্ষা করুন। দুনিয়ার লোভনীয় আকর্ষণ থেকে বাঁচান।

লেখক : প্রাবন্ধিক/ এ এম বি/ পাথরঘাটা নিউজ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)