খালেদা জিয়াকে সাজা দেয়া পছন্দ করেননি ড. কামাল : মির্জা ফখরুল

আবু জর রফি
আবু জর রফি, সাব-এডিটর
প্রকাশিত: ০৯:৫৪ পিএম, ১ মার্চ ২০১৮

---অনলাইন ডেস্কঃ
যে মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে সাজা দেওয়া হয়েছে সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও প্রবীণ আইনজীবী ড. কামাল হোসেন তা কখনোই পছন্দ করেননি বলে মন্তব্য করেছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, উনি অত্যন্ত সিম্পিথেটিক্যালি মামলার বিষয়ে সব কথা শুনেছেন এবং উষ্মা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন এ ধরণের একটা মামলায় সাজা দেওয়াকে তিনি কখনোই পছন্দ করেন না। গতকাল (বুধবার) নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সাথে আলোচনাকালে তিনি এসব কথা বলেন।

খালেদা জিয়ার মামলার আইনজীবী হওয়ার প্রস্তাব ড. কামাল প্রত্যাখ্যান করেছেন গণমাধ্যমে প্রকাশিত এমন সংবাদের বিষয়ে জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে সাক্ষাত নিয়ে গণমাধ্যমে ভুল খবর এসেছে। তিনি (ড. কামাল) দেশে ছিলেন না, দেশে এসেই আমাদের সাথে কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন যে, আমি এটা পড়ে স্টাডি করে আমার মন্তব্য জানাব এবং পরামর্শ দেব। যারা সংবাদটি প্রকাশ করেছেন তাদের বিএনপি মহাসচিব কিংবা কামাল হোসেনের সঙ্গে কথা বলে নেওয়া উচিৎ ছিল বলে মন্তব্য করেন তিনি। বিএনপি মহাসচিব বলেন, একটি পত্রিকায় বড় করে দিয়ে দিয়েছে যে, ড. কামাল প্রত্যাখ্যান করেছেন। এটা তো ঠিক না। বরং উনি খালেদা জিয়ার সাজার বিষয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছেন এবং তা পছন্দ করেননি বলেও জানিয়েছেন।

দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রায়ের প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, বাংলাদেশে বিচারকে প্রহসনে পরিণত করেছে সরকার। বিএনপি চেয়ারপারসনের জামিন পাওয়ায় দেরি করতে সরকার নানা কৌশল নিচ্ছে। তবে মামলায় খালেদা জিয়ার জামিনে দেরির জন্য সরকারকে বিএনপি দায়ী করার পর আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, বিএনপির আইনজীবীদের দোষেই জামিনে দেরি হচ্ছে। মন্ত্রীর এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের আইনজীবীরা দেশের প্রতিথযশা আইনজীবী এবং তারা দীর্ঘদিন ধরে দক্ষতা ও যোগ্যতা দিয়ে মামলা পরিচালনা করছেন। সমস্যাটা সেই জায়গায় না। সমস্যাটা হচ্ছে, তারা (সরকার) ছক করে নিয়েছে। সেই ছক অনুযায়ী তারা মামলা করেছে। বিচার কী হবে, রায় কী হবে? সব কিছুই পূর্বনির্ধারিত। প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাকে পদত্যাগে বাধ্য করার তিন মাস পর খালেদা জিয়ার মামলার রায়ের আগের দিন নতুন প্রধান বিচারপতি নিয়োগের বিষয়টিও ইঙ্গিতপূর্ণ বলে মনে করেন দলের এই নেতা। তিনি বলেন, ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি যিনি হলেন, তাকেও সুপারসিড করে অন্যজনকে প্রধান বিচারপতি করা হল, সেইদিন থেকেই আমরা বুঝে গেছি, দেশে বিচার বিভাগ পুরোপুরি সরকারের নিয়ন্ত্রণে চলে গেল। এখন বিচার এদেশে প্রহসনে পরিণত হয়েছে। কার কাছে যাব আমরা? কার কাছে বলব? সরকার খালেদা জিয়ার কারাবন্দি জীবন দীর্ঘায়িত করে তাকে নির্বাচন থেকে বাদ দিতে চাইছে বলে মন্তব্য করেন বিএনপি মহাসচিব।

মির্জা ফখরুল বলেন, সেইদিনই জামিন হওয়ার কথা। এই জামিন সেইদিন না হওয়ার কোনো কারণ নেই। কিন্তু সেদিন জামিন হল না। এখন তারিখ পড়েছে ১৫দিনের মধ্যে পাঠাও। এটা সরকারের নীল নকশা।
বিএনপিকে ভাঙা যাবে না:

খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে সরকারের নিপীড়নের নিন্দা জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, সারাদেশে ৫ হাজারের বেশি নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে। সব চেয়ে কষ্টকর ও দুঃখজনক যেটা, আমাদের যেসব মহিলা নেতা-কর্মী গ্রেফতার হয়েছেন, তাদেরকে আদালত জামিন দিচ্ছে না। তারিখ দিচ্ছে এক মাস-দেড় মাস পরে। ফলে বয়স্ক মহিলা, অসুস্থ মহিলা যারা বিনা কারণেই গ্রেফতার হয়েছেন, তাদের এভাবে কষ্ট দেওয়া হচ্ছে। তবে এভাবে দমন-পীড়ন চালিয়ে বিএনপিকে ভেঙে ফেলা যাবে না বা বলে সরকারকে হুঁশিয়ার করেন তিনি।
প্রমাণিত হল সংসদ জনপ্রতিনিধিত্বহীন:

জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের বক্তব্যের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে বিএনপি মহাসচিব হাস্যেরসে বলেন, ভাবুন আপনারা, এই সংসদ এমন একটা বিরোধী দল তৈরি করেছে যে, বিরোধী দলের নেত্রী করুন আবেদন করছেন- আমাদেরকে বাঁচান। আমরা কি আসলে সরকারি দল না কি বিরোধী দল- এটা সংসদ নেত্রী আপনিই বলেন। আসলে তারা কী? সেই পরিচয় তারা নিজেরাই জানেন না। এ থেকে বোঝা যায়, তথাকথিত বিরোধী দলীয় নেত্রীর বক্তব্য প্রমাণ করেছে, দেশে আসলে গণতন্ত্র নেই, এই সংসদ জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে না।

নির্বাচনী প্রচারণা নিয়ে নির্বাচন কমিশনে চিঠি:

সরকারি খরচে প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী প্রচারণা নিয়ে নির্বাচন কমিশনে চিঠি দিয়েছে বিএনপি। এ বিষয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা যৌক্তিকভাবে নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়েছি। যখন নির্বাচনের সিডিউল ঘোষণা করা হয়নি, যখন প্রধান বিরোধী দলের নেত্রী কারাগারে এবং বিরোধী রাজনৈতিক কর্মীদের কোনো রকমের রাজনৈতিক কর্মকান্ড করতে দেয়া হচ্ছে না সেই সময়ে প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন জায়গায় দেশ-বিদেশে সভা-সমাবেশ করছেন। একতরফাভাবে দেশনেত্রী বেগম জিয়া ও বিএনপির বিরুদ্ধে কথা-বার্তা বলছেন এবং রাষ্ট্রীয় খরচে যাতায়াত করে জনসভা করে নৌকার জন্য ভোট চাইছেন। আমরা মনে করি, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করা, সকল দলকে সমান সুযোগ দেয়ার ক্ষেত্রে এই একতরফা প্রচারণা সম্পূর্ণ পরিপন্থি। এটা নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব এটাকে বন্ধ করা এবং সকলকে সমান সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়া। তিনি বলেন, এই নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে আমরা বার বার বলে আসছি, তারা দল নিরপেক্ষ নয়, তারা সরকারের কাছে নত হচ্ছে। এই একরতফা প্রচারণা যদি ইসি বন্ধ না করে তাহলে এটাই প্রমাণিত হবে যে, এই কমিশন পুরোপুরি সরকারকেই সহযোগিতা করছে।