বরগুনায় ভিজিএফ চাল মাপে কম দেওয়ার অভিযোগ

ডেস্ক নিউজ
ডেস্ক নিউজ,
প্রকাশিত: ১১:১১ এএম, ২১ আগস্ট ২০১৮

বরগুনায় ভিজিএফ চাল মাপে কম দেওয়ার অভিযোগপবিত্র ঈদুল আযহা উপলক্ষ্যে অতিদরিদ্র ও অসহায় দুস্থ পরিবারের মাঝে ভিজিএফের চাল (খাদ্য সহায়তা) বিতরণে বরগুনা পৌরসভায় ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী ২০ কেজি করে চাল বিতরণের কথা থাকলেও দেয়া হচ্ছে ৮ থেকে১০ কেজি। এ অনিয়মের অভিযোগে একটি ওয়ার্ডের চাল বিতরণ বন্ধ করে দিয়েছে প্রশাসন।

বরগুনা পৌরসভা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ভিজিএফ (খাদ্য সহায়তা) কর্মসূচির আওতায় পবিত্র ঈদুল আযহা উপলক্ষ্যে বরগুনা পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে ৪ হাজার ৬২১ অতিদরিদ্র ও অসহায় দুস্থ পরিবারের জন্য ২০ কেজি করে মোট ৯২ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দিয়েছে সরকার।

কিন্তু সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের পুরুষ কাউন্সিলরা ২০ কেজির পরিবর্তে চাল বিতরণ করছে ৮ থেকে ১০ কেজি । বরগুনা পৌরসভার ১,২,৩ ও ৭,৮,৯ নম্বর ওয়ার্ডে সরেজমিনে গিয়ে চাল বিতরণে অনিয়মের সত্যতা পাওয়া যায়।

রোববার দুপুরে বরগুনা পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডে চাল বিতরণের অনিয়ম করায় সুবিধাভোগীদের তোপের মুখে পড়েন কাউন্সিলর আমিনুল ইসলাম স্বপন।

এ সময় বরগুনা পৌরসভার মেয়র মো. শাহাদাত হোসেন ও সহকারি কমিশনার ভূমি আল- নোমান ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। চাল বিতরণে অনিয়ম দুর্নীতির কারণে ক্ষোভ বিরাজ করছে পৌরসভার প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে।

এদিকে পরিমানে কম দেয়া এবং সহায়তাভোগীদের চাপে পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের চাল বিতরণ বন্ধ করে দিয়েছে প্রশাসন। সঠিক তালিকা অনুযায়ী প্রশাসনের সহযোগিতায় ২১ আগস্ট এই ওয়ার্ডে চাল বিতরণের কথা রয়েছে।

বরগুনা পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের সুবিধাভোগী নুরুল ইসলাম ভাণ্ডারি বলেন, বরগুনা পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর স্বপনের কথা মতো বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্সে চাল আনতে গিয়ে দেখি ২০ কেজি চালের পরিবর্তে দেওয়া হচ্ছে ৮ থেকে ১০ কেজি করে। এর প্রতিবাদ করলে স্বপন আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও আমাকে চাল না দেওয়ার হুমকি দেয়। এসময় তিনি যা দিচ্ছেন তা না নিলে চাল নেওয়া লাগবে না বলেও উল্লেখ করেন।

একই অভিযোগ করেন রহিমন, সেলিম, শেফালী, মালেকা ও শিউলিসহ একাধিক সুবিধাভোগীরা জানান, বরগুনা পৌরসভার প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে পুরুষ কাউন্সিলররা ৮ থেকে ১০ কেজি করে চাল বিতরণ করছে । এ বিষয়ে নারী কাউন্সিলরদের কাছে অভিযোগ করলে উল্টো তাদের হয়রানি করছে পুরুষ কাউন্সিলররা।

সাধারন সুবিধাভোগীরা চাল কম দেওয়ার বিষয়ে প্রতিবাদ করলে মারধরের হুমকি ও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজও করা হয় বলে তারা অভিযোগ করেন।

চাল বিতরণে অনিয়মের সত্যতা স্বীকার করে বরগুনা পৌরসভার ১,২,৩ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর জেছমিন আরা বলেন, গরীব দুস্থদের চাল আত্মসাৎ করার জন্য ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর স্বপন সুবিধাভোগীদের ৮ থেকে ১০ কেজি করে চাল বিতরণ করছে। এসময় সুবিধাভোগীরা আমার কাছে অভিযোগ করলে আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে স্বপনের কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে স্বপন আমাকে বিষয়টি চেপে যেতে বলে। কিন্তু আমি প্রতিবাদ করলেও স্বপন আমার উপরও চড়াও হয়।

তিনি আরো বলেন, সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী বরগুনা পৌরসভায় ২০ কেজি করে চাল দেওয়ার কথা থাকলেও তিনি দিচ্ছেন ৮ থেকে ১০ কেজি করে। এ বিষয়ে প্রশাসনের উচিৎ কাউন্সিলর স্বপনসহ বরগুনা পৌরসভায় যারা চাল বিতরণে অনিয়ম করছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করা।

নারী কাউন্সিলররা মনে করেন, ভিজিএফ এর চাল বিতরণে পুরুষ কাউন্সিলরদের একক কতৃত্ব দেওয়া এই সমন্বয়হীনতা তৈরি হয়েছে। ভিজিএফর চাল বিতরণসহ সকল ত্রাণ বিতরণের ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষ কাউন্সিলরদের সমান অগ্রাধিকার দেওয়া হলে এই সমস্যা থাকবে না বলেও তারা মনে করেন।

এ বিষয়ে ৭,৮,৯ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর নাসরিন আক্তার বলেন, একজন পুরুষ কাউন্সিলর একটি ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকেন আর একজন নারী কাউন্সিলর তিনটি ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকেন। তারপর বিভিন্ন ত্রাণ বিতরণে নারী কাউন্সিলরদের উপেক্ষা করা হয়। আর এই কারণে পুরুষ কাউন্সিলররা তাদের ইচ্ছামতো ত্রাণ বিতরণ করেন।

চাল কম দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বরগুনা ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আমিনুল ইসলাম স্বপন বলেন, শুধু আমিই একাই নয় বরগুনা পৌরসভার প্রত্যোকটি ওয়ার্ডে কাউন্সিলররা ৮ থেকে ১০ কেজি করে চাল বিতরণ করছেন। এর কারণ হচ্ছে আমরা যে পরিমান বরাদ্ধ পাই তার চেয়ে বেশি সুবিধাবঞ্চিত মানুষ থাকায় সবার মাঝে সমান হারে বিতরণের জন্য একজনকে কম দিয়ে অন্যজনকে দেওয়া হচ্ছে।

চাল বিতরনে মহিলা কাউন্সিলরদের তুচ্ছ তাচ্ছিল্যের সাথে দেখা ও পুরুষ কাউন্সিলরদের এসব কর্মকাণ্ডে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বরগুনা পৌরসভার মেয়র মো. শাহাদাত হোসেন।

তিনি বলেন, যে বা যারা পৌরসভার সুবিধাভোগীদের মধ্যে চাল বিতরণে অনিয়ম ও দুর্নীতি করছেন তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের কাছে অনুরোধ থাকবে আইনআনুগ ব্যবস্থা গ্রহণের।

এ বিষয়ে বরগুনা জেলা প্রশাসক মো. মোখলেছুর রহমান বলেন, সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করে চাল বিতরণের কোন সুযোগ নেই। তারপর কিছু জায়গা অনিয়মের খবর পেয়ে চাল বিতরণ বন্ধ করে দিয়েছিলাম সেসব স্থানে সঠিক তালিকা অনুযায়ী চাল বিতরণ করা হবে।(সূত্রঃ পরিবর্তন.কম)

পাথরঘাটা নিউজ/এএসএমজে/২১ আগস্ট

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)