যেখানে টাকা দিয়ে বউ কেনা যায়

ডেস্ক নিউজ
ডেস্ক নিউজ,
প্রকাশিত: ১২:৪৭ পিএম, ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮

ছবিঃ সংগ্রহীতঅল্প বয়সী মেয়েদের টাকার বিনিময়ে বিক্রি করার মতো ভয়াবহ ঘটনা নাইজেরিয়ার একটি সম্প্রদায়ের জন্য নিত্যদিনের ব্যাপার। নাইজেরিয়ার সর্বদক্ষিণের ক্রস রিভার রাজ্যের বেশেরে সম্প্রদায়ে মানি ম্যারেজ বা অর্থের বিনিময়ে অল্প বয়সী মেয়েদের বিয়ের নামে বিক্রি করে দেয়া একটি প্রচলিত প্রথা।

মূলত দারিদ্র্যপীড়িত পরিবারের শিশুদের বিয়ের নামে মোটা অংকের বিনিময়ে কিনে নেন প্রভাবশালীরা। দেশটির আরও কয়েকটি সম্প্রদায়ের মধ্যে এখনও এ ধরনের বিতর্কিত প্রথার চল রয়েছে।-খবর বিবিসি বাংলার।

যেখানে বিক্রি হওয়া মেয়েটির না থাকে কোনো স্বাধীনতা বা শিক্ষা ও চিকিৎসা পাওয়ার সুযোগ। স্থানীয় ধর্মীয় নেতারা এ প্রথার বিরুদ্ধে প্রচারণা চালালেও কোনো লাভ হচ্ছে না।

সেই সম্প্রদায়ের তরুণী ডরফি। তার বয়স এখন প্রায় বিশের কোটায় হলেও তাকে যখন বিয়ে দেয়া হয়েছিল তার বয়স ছিল মাত্র ১০-১১ বছর।

ওই বয়সে তাকে এমন এক ব্যক্তির হাতে তুলে দেয়া হয়েছিল, যার বয়স কিনা তার নানা-দাদার চেয়েও বেশি। ডরফির আপন মা ও চাচা টাকার জন্য তাকে ওই বৃদ্ধের কাছে বিক্রি করে দিয়েছিল। বাধ্য করেছিল মানি ম্যারেজ করতে।

এখনও সেই দিনগুলোর কথা মনে করে ভয়ে শিউরে ওঠেন ডরফি। তিনি জানান, লোকটি আমার সঙ্গে শুতে চাইলে আমি বলতাম- না, আমি এমনটি হতে দেব না। কারণ আপনি আমার বয়সের না। আপনার ছেলেমেয়েরাও আমার অনেক বড়। যখন আমি মানা করতাম, তখন সে আরও দুজন লোক ডেকে আমার ওপর জবরদস্তি করত।

এভাবেই অমানুষিক নির্যাতনের একপর্যায়ে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন ডরফি। অথচ সন্তান ধারণ করার মতো বয়সও তখন তার হয়নি। মানি ওয়াইফ বা অর্থের বিনিময়ে বিক্রি হওয়া বউ হওয়ায় ডরফির যেন সাহায্য চাওয়ারও কোনো জায়গা ছিল না।

বেশেরে সম্প্রদায়ে মূলত দুই ধরনের বিয়ে রয়েছে। একটি হল লাভ ম্যারেজ বা ভালোবাসার বিয়ে এবং অপরটি এই মানি ম্যারেজ।

লাভ ম্যারেজে স্ত্রীর জন্য কোনো পণ দিতে হয় না। নববধূ স্বাধীনভাবে বাবার বাড়ি আসতে যেতে পারে এবং তার ঘরে যে সন্তান জন্ম নেবে সেটি মায়ের পরিবারের উত্তরসূরি হিসেবে বিবেচিত হয়।

কিন্তু মানি ম্যারেজে কম বয়সী মেয়েদের বিক্রি করে দেয়ায় তারা তাদের স্বামীর পরিবারের সম্পত্তিতে পরিণত হয়। এমনটিই জানান স্থানীয় মিশনারি ও শিশু অধিকার আন্দোলনকারী পস্তোর রিচার্ড। তিনি বলেন, একজন মানি ওম্যানের কোনো সম্মান থাকে না। তাদের স্কুলে যাওয়ার অনুমতি নেই। তাদের ঠিকঠাক খেতেও দেয়া হয় না। সে সবার উচ্ছিষ্ট খায়। তারা শিশু শ্রম থেকে শুরু করে অমানবিক যৌন নিপীড়নের শিকার হয়। অনেকে অন্তঃসত্ত্বা হলেও মায়ের বাড়ি যাওয়ার সুযোগ পায় না।

এই সম্প্রদায়েরই আরেকজন সদস্য মনিকা। তিনি থাকেন গাছপালাবেষ্টিত একটি এলাকায়, যার চারপাশ উঁচু পাহাড় আর সবুজের গালিচায় ছাওয়া।

তবে সেই সুন্দরের ছোঁয়া মনিকার পরিবারে নেই। তিনি তার দুই নাতনিকে খুব ছোট থাকতেই মানি ম্যারেজের জন্য বিক্রি করে দিয়েছেন।

এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, পরিবারকে জুজু নামে অভিশাপ থেকে রক্ষা করতে মোটা অংকের অর্থ দরকার ছিল। আর এ জন্যই তিনি নাতনিদের বিক্রি করে দিয়েছিলেন। তবে এক বছর পর সেই সিদ্ধান্তের জন্য ভীষণ অপরাধবোধে ভুগছেন মনিকা।

তার নাতনি হ্যাপিনেসের এখন বয়স ১৫ বছর। গত বছর সে তার মানি ম্যারেজ থেকে পালিয়ে এসেছে। হ্যাপিনেস জানান, ওই লোকটার এতই বয়স যে তার নাতি-নাতনির ঘরেও সন্তান রয়েছে। লোকটা প্রায়ই আমাকে মারত আর বলত, আমাকে যদি সে পিটিয়ে মেরেও ফেলে তাকে কেউ কিছু বলতে পারবে না। আমাকে মেরে ফেললেও তার কিছু হবে না। কারণ আমি তার মানি ওয়াইফ।

ওই ঘটনার কারণে মনিকার সঙ্গে তার দুই মেয়ে ও দুই নাতনির সম্পর্ক আজও স্বাভাবিক হয়নি। এখনও দাদির প্রতি তীব্র ক্ষোভের কথা জানান হ্যাপিনেস।

পাথরঘাটা নিউজ/এএসএমজে/৪ সেপ্টেম্বর

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)