কেনো আওয়ামীলীগে ভোট দিবো - পর্ব-১

মামুন আকন
মামুন আকন, ফিচার লেখক
প্রকাশিত: ১০:০৬ এএম, ৫ অক্টোবর ২০১৮ | আপডেট: ০৮:১৪ এএম, ১২ মে ২০১৯

কেনো আওয়ামীলীগে ভোট দিবোআসছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন । চলতি বছরের শেষের দিকে অথবা ২০১৯ সালের জানুয়ারী মাসের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্য হবে বলে আশা করা যায় । এরই মধ্যে সংসদীয় আসনের সব এলাকায় শুরু হয়ে গিয়েছে নির্বাচনের প্রচার প্রচারণা। সরকারী দল,বিরধীদল এমনকি সতন্ত্র প্রার্থীরাও শুরু করেছে তাদের নির্বাচনী প্রচার প্রচারণা। কিন্তু কথা হলো ভোট দিবো কাকে??

স্বাধীনতার পর থেকে আমরা দেখে আসছি এদেশের মানুষ পাঁচ বছরের বেশি কোনো দলকে ক্ষমতায় রাখেনী। পালাক্রমে সরকার পরিবর্তন করে আসছে। যার ধারাবাহিকতায় সরকার বদল হলেও ২০০৯ সালের আগপ্রযন্ত এদেশের মানুষের ভাগ্যের বদল হয়নী।

কিন্তু গত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ক্ষমতায় আসে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ। ক্ষমতায় আসার পর থেকে একের পর এক উন্নয়ন কর্মসূচী হাতে নেয় এবং তা বাস্তবায়নের জন্য কাজ শুরু করে। ধারাবাহিক ক্রমে এসে যায় দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং টানা দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমাতা গ্রহন করে আওয়ামীলীগ। যার মেয়াদও চলতি বছরে শেষ হয়ে যাবে। এখন কথা হলো এই ১০ বছরের শ্বাসন আমলে আমরা কি পেয়েছি আসুন তার একটা পর্যালোচনা করি?

বেঁচে থাকার জন্য একটা মানুষের ৫ টি মৌলিক চাহিদা পূরণ হওয়া অত্যাবশ্যক। তাই প্রথমেই দেখব আমাদের ৫ টি মৌলিক চাহিদার কি কি পূরণ করতে পেরেছে এ সরকার?

১.খাদ্য :-
মানুষের মৌলিক চাহিদার প্রথম এবং প্রধান হিসেবে বিবেচনা করা হয় খাদ্যকে। বিশ্ব অর্থনীতির পরিসংখ্যানে খাদ্যশস্য উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে অনন্য উদাহরণ। ধান, সবজি, আলু ও ভুট্টাসহ খাদ্যশস্য উৎপাদনে বিশ্বের গড় উৎপাদনকে পেছনে ফেলে দিয়েছে। জাতিসংঘের কৃষি ও খাদ্য সংস্থার তথ্যানুযায়ী, চাল উৎপাদনে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ৪র্থ। দেশে ২০০৮-০৯ সালে দানাদার খাদ্যশস্য (চাল, গম ও ভুট্টা) উৎপাদন হয়েছিল ৩ কোটি ২৮ লাখ ৯৫ হাজার মেট্রিক টন এবং ২০১৬-১৭ অর্থবছরে তা বৃদ্ধি পেয়ে ৩ কোটি ৮৬ লাখ ৯৩ হাজার মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে। ডাল, তেল, আলু, সবজিসহ অন্যান্য ফসলের উৎপাদনও একইভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। তাছাড়া, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ জলাশয়ে মৎস্য আহরণে ২০১৬ সালে বিশ্বে চতুর্থ স্থান অধিকার করেছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দেশে ৪০.৩৯ লাখ মেট্রিক টন চাহিদার বিপরীতে মৎস্য উৎপাদন ৪০.৫০ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে। তাতে আমরা যে খাদ্যে সয়ংসম্পন্য তা কিন্তু বলা যায় ।

২.বস্ত্র :-
বাংলাদেশের মানুষ এখন আর ছেড়া কাপড় পরে না। পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশের সাথে আমদের দেশের মানুষের পোষাক আশাকের সাথে তুলনা করলে আমরা যে তাদের থেকে ভালো জামা-কাপড় পরি তা আন্তর্জাতিক বাজারের দিকে তাকালে নিঃসন্দেহে মানা যায়। লক্ষ্য রয়েছে আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশজ বস্ত্র উৎপাদন দ্বিগুণ অর্থাৎ ১৪ হাজার মিলিয়ন মিটার করার। এসব কারণে সরকার বস্ত্রনীতি ২০১৬-এর খসড়াও প্রণয়ন করেছে। তাই এখাতের আলোচনা না করলেও হয়। তারপরেও শিল্পখাতে এর বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।

৩.বাসস্থান:-
ক্ষমতায় আসার পরে ২০১০ সালে সরকার ৪ হাজার ৮৪০ দশমিক ২৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৯ সালের মধ্যে ২ দশমিক ৫০ লাখ পরিারের আশ্রয়নের ব্যবস্থা করতে আশ্রয়ন প্রকল্প-২ গ্রহণ করে। যার ধারাবহিকতায় সারা দেশে আশ্রায়ন প্রকল্পের আওতায় ১ লাখ ৪৩ হাজার ৬৯২ গৃহহীন পরিবারকে পুনর্বাসন করেছে এবং বাকিদেরও ২০১৯ সালের মধ্যে পুনর্বাসন করা হবে বলে খুব দ্রুত এপ্রকল্প এগিয়ে চলছে। বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, আমাদের এলাকার আগে ভিক্ষা করে খেতো এমন লোকেও এখন ৩লক্ষ টাকা প্রতি শতাংশ মূল্যের জমি কিনে ঘর তুলে থাকে।

৪.শিক্ষা:-
দরিদ্র শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে উপবৃত্তি ও বেতন মওকুফ সহায়তা হিসেবে ৪৯ লক্ষ ২৩ হাজার ৪৮৫ শিক্ষার্থীকে ৮৮০.২৭ কোটি টাকা বিতরন করা হয়। এবং জাতিসংঘের বেধে দেয়া সময়সীমার তিন বছর আগেই ২০১২ সালে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষায় ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যাগত সমতা অর্জন করে। এটি সম্ভব হয়েছে মহাজোট সরকারের কঠোর পরিশ্রম ও আন্তরিকতার ফলে। ২০১৪ সালে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নীট ভর্তির হার ৯৭.৩০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে এবং ঝরে পড়ার হার হ্রাস পেয়ে ২০.০৯ শতাংশে দাড়িয়েছে। ২০১৬ শিক্ষাবর্ষে ৪ কোটি ২৬ লাখ ৫৩ হাজার ৯২৯ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৩৬ কোটি ২১ লাখ ৮২ হাজার ২৪৫টি পাঠ্যপুস্তক বিনামূল্যে বিতরন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে প্রাথমিক শিক্ষা সংশ্লিষ্ট মাঠ পর্যায়ের দপ্তরসমূহে ইন্টারনেট সংযোগসহ ৫৫টি পিটিআইতে কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। ৫ হাজার ৪৩০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ল্যাপটপ, মাল্টিমিডিয়া, ইন্টারনেট মডেম ও সাউন্ড সিস্টেম সরবারহ করা হয়েছে। তাছাড়া কিছুদিন আগেও ২৭১ কলেজকে জাতীয়করণ, বেশকিছু বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়কে সরকারি করণ, নতুন নতুন প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করেই যাচ্ছে সরকার। এতেকরে দেশের মানুষ বিনামূল্যে শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে।

৫.চিকিৎসা:-
স্বাস্থ্যসেবাকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেবার লক্ষ্যকে সামনে রেখে নির্মাণ করা হয়েছে নতুন ১২টি মেডিকেল কলেজ, নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ৪৭ হাজারেও বেশি জনশক্তি। তাছাড়া ডাক্তারের সংখ্যা বাড়াতে ৩৯তম স্পেশাল বিসিএস’র মাধ্যমে ৪৫০০ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হলেও পিএসসি চেয়াম্যানের ভাস্যমতে ৭৫০০ এর অধিক ডাক্তার নিয়োগের কার্যক্রম চলমান ।অন্যদিকে, শিশুদের টিকাদান কর্মসূচির সাফল্যের জন্য এক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বে অন্যতম আদর্শ দেশ হিসেবে তার স্থান করে নিয়েছে। স্বাস্থ্যখাতকে যুগোপযোগী করতে প্রণয়ন করা হয়েছে “জাতীয় স্বাস্থ্য নীতিমালা-২০১১”। তৃণমূল পর্যায়ের দরিদ্র মানুষদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে গড়ে তোলা হয়েছে ১২ হাজার ৭৭৯টি কমিউনিটি ক্লিনিক। ৩১২টি উপজেলা হাসপাতালকে উন্নীত করা হয়েছে ৫০ শয্যায়। মেডিকেল কলেজ ও জেলা হাসপতালগুলোতে ২ হাজার শয্যা সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে। মাতৃ ও শিশু মৃত্যুহার এবং জন্মহার হ্রাস করা সম্ভব হয়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। ১৯৯০ সালে নবজাতক মৃত্যুর হার ১৪৯ থেকে নেমে বর্তমানে দাঁড়িয়েছে ৫৩তে। চিকিৎসা খাতে আমদের অবস্থান আগের থেকে বহুগুন যে এগিয়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

এতো গেলো বেঁচে থাকার জন্য মানুষের প্রধান ৫টি মৌলিক চাহিদার কথা। যেগুলো ছাড়া মানুষের বেঁচে থাকা অসম্ভব। আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে যার প্রতিটি খাতেই দিনে দিনে সকল চাহিদা মিটিয়ে উন্নতি লাভ করেছে।

আগামী পর্বে দেশের সামগ্রীক অর্থনীতি নিয়ে আলোচনা করা হবে………………………………………..(চলবে…………………………)

মামুন আকন
সাংবাদিক ও কলাম লেখক
ইমেইলঃ mamunakon94@gmail.com

পাথরঘাটা নিউজ/এএসএমজে/৫ অক্টোবর

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)