চোখ জুড়ায় পাথরঘাটার হরিণঘাটা বনে

আকন মোঃ বসির
আকন মোঃ বসির, প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ১১:০৭ এএম, ১৯ অক্টোবর ২০১৮

ডানে হরিণঘাটা বনে জুলন্ত সেতু, বামে হরিণঘাটা বনের মধ্যের ছোট ছোট খালএকদিকে সীমাহীন সাগরের মোহনীয় গর্জন, অন্যদিকে হাজারও প্রজাতির বৃক্ষসমৃদ্ধ চির সবুজ বনভূমিতে পাখির অবাধ বিচরণ। সবমিলিয়ে সাড়ে ৬ হাজার একর বিস্তৃত নয়নাভিরাম পাথরঘাটা উপজেলার হরিণঘাটা বনে রয়েছে বিপুল পর্যটন সম্ভাবনা। সাগর মোহনার চর জুড়ে প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা ২৬ হাজার বন বৃদ্ধি করেছে বনের সৌন্দর্য। সেই সঙ্গে সরকারি উদ্যোগে সৃজিত বনায়নের ফলে বনের পরিধি বাড়ছে। হিংস্র প্রাণী না থাকলেও আছে সুনন্দ হরিণ, বানর, শূকর, গুইসাপ, নানা প্রজাতির সরীসৃপসহ ২৫ প্রজাতির বন্য প্রাণী।

এ ছাড়া ৭০/৮০ প্রজাতির পাখি আর অগণিত প্রজাপতি, ফড়িংসহ নানা পতঙ্গকুল। শীত মৌসুমে বিদেশি পরিযায়ী পাখীর পদচারণায় মুখরিত হয় বনের বৃক্ষরাজি। এখানে গেওয়া, কেওড়া, পশুর, আমুর, কাঁকড়া আর সৃজিত সুন্দরী, গোলগাছ এবং ঝাউবন বনটিকে করেছে সৌন্দর্যমণ্ডিত। বনের ভিতরে এঁকেবেঁকে চলা ছোট বড় মিলিয়ে ১০/১২টি প্রবহমান খাল। সেই সঙ্গে বনের দক্ষিণ সীমানায় সাগর মোহনার চরে মৌসুমি শুঁটকিপল্লী।

জানা গেছে, ১৯৬৭ সাল থেকে বন বিভাগ হরিণঘাটা বনটি সম্প্রসারণে নানা প্রজাতির বৃক্ষ দিয়ে বন সৃজন শুরু করে। বর্তমানে সাড়ে ৬ হাজার একর জুড়ে দৃষ্টি নন্দন এ বনে প্রাকৃতিক কেওড়া, গেওয়া, পশুর, ছৈলা, কাঁকড়া, আমুর, বাইন, করমজা, খলিসাসহ সৃজিত সুন্দরী, খালের পাড় জুড়ে গোলপাতা গাছ ও সাগরের মোহনায় ঝাউবন রয়েছে। সংরক্ষিত এ বনকে পর্যটন এলাকা হিসেবে গড়ে তুলতে জলবায়ু ট্রাস্ট তহবিলের মাধ্যমে বন বিভাগ কর্তৃক হরিণঘাটা বন ও সাগর তীর দর্শনে নির্মাণ করা হয়েছে ফুট ট্রেইল (বনের ভিতর পায়ে চলা পথ)। এ ছাড়া বনের ভিতর ওয়াচ-টাওয়ার, বিশ্রামাগার গোলঘর নির্মাণের ফলে প্রতিদিন এ বনে দর্শনার্থী ছুটে আসছে। প্রতিদিন এখানে বৃদ্ধি পাচ্ছে মানুষের সমাগম। আসছে শিশু ও নারীসহ সব বয়সের মানুষ। বন অধিদফতর হরিণঘাটা বন সম্প্রসারণে ২০১৩ সালে এখানে ১০০ হেক্টর এলাকা জুড়ে নতুন বন সৃজিত করা হয়। হরিণঘাটা সংরক্ষিত বন এখন বণ্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য।

পাথরঘাটা রেঞ্জ কর্মকর্তা জানান, ইতিমধ্যে বনবিভাগ অভয়ারণ্য হিসেবে প্রাণীর নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে আইনগত ক্ষমতা প্রয়োগের জন্য অনুমতি চেয়েছে মন্ত্রণালয়ে। এখানের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মানুষকে আকৃষ্ট করায় দর্শনার্থীরা এ বন ও সাগর তীর দর্শনে আসছেন। সাগর তীরে লালদিয়ার চরে নতুন বন সৃষ্টি হওয়ায় বনাঞ্চলের পরিধি ক্রমে বেড়ে চলছে। এ ম্যানগ্রোভ বন পাথরঘাটা উপজেলা শহর থেকে কাছে হওয়ায় ও বনে হিংস্র জীব-জন্তু না থাকায় মানুষ পরিবার পরিজন নিয়ে বেড়াতে আসছেন।

হরিণঘাটা বন সংলগ্ন স্থানীয় কৃষক জলিল মৃধা বলেন, হরিণঘাটার অবস্থানগত সুবিধার কারণে এখান থেকে সুন্দরবন ও ফাতরার চর দর্শন সহজ ও স্বল্প ব্যায় সাধ্য। এক উদ্দেশ্যে আসলে পর্যটকরা তিনটি স্থান দর্শন করে তৃপ্ত হবেন।

বন বিভাগ পাথরঘাটা রেঞ্জ কর্মকর্তা জানান, হরিণঘাটা বনাঞ্চলে ইকো ট্যুরিজম হিসেবে গড়ে তুলতে দর্শনার্থীদের স্বাচ্ছন্দ্যে চলাচলের জন্য বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় জলবায়ু ট্রাস্টের তহবিলের আওতায় বনের ভিতর একটি ঝুলন্ত সেতুসহ পায়ে চলা পথ নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করে। বনের ভিতর আঁকাবাঁকা ২ হাজার ৯৫০ মিটার দৈর্ঘ্য এ ফুট ট্রেইল নির্মাণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে বনের ভিতর চারটি বিশ্রামাগার সদৃশ গোলঘর নির্মাণ ও একটি ৬০ ফুট মিটার উচ্চতার ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ হয়েছে। হরিণঘাটা বনে পর্যটন এলাকা হিসেবে ফুট ট্রেইলসহ নানা কার্যক্রম চলমান থাকায় প্রতিদিন হরিণঘাটা বন ও সাগর পাড়ে দর্শনার্থীরা ভিড় করছেন। এতে এলাকার মানুষ নানা সম্ভাবনার আশা খুঁজতে শুরু করেছেন।

হরিণঘাটা বনের ওপর নির্ভরশীল স্থানীয় বনজীবী আবুল কাশেম বলেন, বনের মধ্যে ঝুলন্ত রাস্তা তৈরির কারণে প্রতিদিন বনে ঘুরতে মানুষ আসছে। এ রাস্তা দ্রুত লাল দিয়ার চর পর্যন্ত নিতে পারলে সাগর পাড়ে সূর্য ওঠা ও ডোবা দেখতে পাওয়া যাবে। ইচ্ছা করলে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় চড়ে বনের মধ্যে প্রবাহমান সরু খালে সময় কাটাতে পারছেন দর্শনার্থীরা। এতে এলাকায় ব্যবসা বাণিজ্যের গতি সঞ্চার হচ্ছে।

পাথরঘাটা উপজেলা চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলাম রিপন বলেন, হরিণঘাটা বনভূমিটি পিকনিক স্পট ও পর্যটন স্পট হিসেবে গড়ে তুলতে পারলে একদিকে বাণিজ্যিক প্রসারতা বাড়বে, সৃষ্টি হবে নতুন নতুন কর্মসংস্থান। পাশাপাশি বন ও পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে।

পাথরঘাটা নিউজ/এএসএমজে/১৯ অক্টোবর

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)