মির্জাগঞ্জে স্ত্রীর লাশ নিয়ে চায়ের দোকানে রাত কাটালো স্বামী

ডেস্ক নিউজ
ডেস্ক নিউজ,
প্রকাশিত: ০৯:৫৯ এএম, ২০ জুন ২০২০

ছবিঃ সংগ্রহীতপটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার ঝাটিবুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা জলিল আকনের স্ত্রী কহিনুর বেগম কয়েকদিন ধরে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত ছিলেন।

গত বৃহস্পতিবার সকালে হঠাৎ অচেতন হয়ে পড়েন তিনি। পরে মির্জাগঞ্জ উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে তাকে ভর্তি করা হলে রাত ১০টায় তিনি মারা যান। করোনা ভাইরাসে অন্যদের আপত্তি থাকায় রাতে হাসপাতালে থেকে স্ত্রীর লাশটি সকালে নিতে চাচ্ছিলেন জলিল।

কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জোর করে কোহিনুরের মরদেহটি একটি অটোতে তুলে জলিলকে রাতেই পাঠিয়ে দেয়। মৃত স্ত্রীর লাশ নিয়ে যে বসতবাড়িতে যাবেন সে পরিস্থিতিও নেই জলিলের। কারন গত ১৪ মে আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে তাদের বসতঘরটি। স্ত্রীর মারা যাওয়ার আগে সন্তানকে নিয়ে অন্য একজনের বাড়ির বৈঠকখানা ছিলো তাদের আশ্রয়স্থল। এমন পরিস্থিতিতে স্ত্রীর লাশটি নিয়ে গভীর রাতে হতভাগ্য জলিল ওঠেন নিজের খুপরি চায়ের দোকানে। এদিকে শুরু হয় বৃষ্টি। সদ্য মৃত স্ত্রীর পাশে বৃহস্পতিবার (১৮ জুন) সারারাত বসেছিলেন জলিল।

সকাল হলে গ্রামবাসী কোহিনুরের মৃত্যুর খবর জানতে পারে। কিন্তু তাও কেউ এগিয়ে না আসায় স্ত্রীর মরদেহ নিজেই গোসল করান জলিল। পরে স্থানীয় মো. মিজানুর রহমান এবং সুবিদখালী সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি মো. মাহবুব আলমের নেতৃত্বে কয়েকজন মিলে লাশ দাফনের ব্যবস্থা করেন।

কান্নাজড়িত কন্ঠে জলিল বলেন, ‘আমার বাড়িতে ঘর নেই। আগুনে পুড়ে গিয়েছিল। তা না হলে বাড়িতেই কোহিনুরের লাশ নিয়ে আসতে পারতাম। তাই তার লাশ শুক্রবার সকালে আনতে চেয়েছিলাম, কিন্তু ডাক্তার শরিফুল ইসলাম রাতেই একটি অটোতে করে লাশ পাঠিয়ে দিয়েছে।’

এ ব্যাপারে মির্জাগঞ্জ উপজেলা হাসপাতালে দায়িত্বরত চিকিৎসক মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘আসলে আমরা সব মৃত ব্যক্তির ক্ষেত্রেই দাফন-কাফনের জন্য দ্রুত প্রস্তুতি নিতে বলি। জোর করে তাকে (জলিল আকন) লাশ দেওয়া হয়নি। বুঝিয়ে শুনিয়ে তার সঙ্গে লাশ পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।’

এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা দিলরুবা ইয়াসমিন ঘটনাটি দুঃখজনক জানিয়ে বলেন, ‘দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় মধ্যে রাতে লাশ বাড়িতে পাঠানো উচিত হয়নি। শুনেছি, ওই নারীর বাড়ি কয়েক দিন আগে আগুনে পুড়ে গেছে। আমি যখন বিষয়টি জেনেছি, তখন লাশ তাঁদের বাড়িতে পৌঁছে গেছে। ওই নারী ইউরিনারি ইনফেকশনজনিত রোগে ভুগছিলেন।’

এদিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের আচরণে বিস্মিত উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান খান মো. আবু বকর ছিদ্দিকী বলেন, ‘আমি স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে রাত ১১টায় ফোন করে বলেছিলাম লাশ পরেরদিন হস্তান্তর করতে। কিন্তু তারা রাতেই লাশ পাঠিয়ে দিয়েছেন, এটা অত্যন্ত দুঃখজনক।’

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)