সাগরে বেড়েছে ডাকাতি, ৫ জেলেকে অপহরণ, আতঙ্কিত জেলেরা, প্রশাসন নিরব

কাজী রাকিব
কাজী রাকিব, নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৭:২৬ পিএম, ২১ নভেম্বর ২০২১

পাথরঘাটা বরগুনা প্রতিনিধি,

দীর্ঘ চার বছর বঙ্গোপসাগর জলদস্যু মুক্ত থাকলেও আবারো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে জলদস্যুরা। গত পাঁচ দিনে অন্তত ১৫ টি ট্রলার ডাকাতি, ৫ জেলেকে অপহরণ করে ১৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেছে। এসময় জলদস্যুদরা এক জেলেকে গুলি করে হত্যা ও শতাধিক জেলেকে পিটিয়ে আহত করেছে। এনিয়ে উপকূলীয় জেলেরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। মালিক সমিতির, আড়ৎদার সমিতি, ট্রলার শ্রমিক ও মৎস্যজীবী নেতাদের অভিযোগ এ নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর।


জানা যায়, রবিবার সকালে ২ জেলে, শনিবার রাত সাড়ে আটটার দিকে ২ জেলে এবং শনিবার সকালে এক জেলেকে অপহরণ করে নিয়ে গেছে। এর আগে গত মঙ্গলবার পাথরঘাটা মো. মুসা নামে এক জেলেকে গুলি করে হত্যা করেছে।  এ নিয়ে রবিবার বেলা সাড়ে এগারোটায় দেশের বৃহত্তর মৎস্য বন্দর পাথরঘাটা (বিএফডিসি) মৎস্য ঘাটে ট্রলার মালিক সমিতি, জেলে সমিতি, আড়ৎদার সমিতি, পাইকার সমিতি, ট্রলার শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দের সাথে জরুরি বৈঠক করে পাথরঘাটা থানা পুলিশ। এসম মৎস্য ব্যবসার সাথে সংশ্লিষ্টরা অভিযোগ করেন ঘটনার পাঁচ দিন অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো দৃশ্য মান কার্যক্রম দেখা যায়নি‌। এতে ট্রলার মালিকসহ মৎস্যজীবীরা ক্ষুব্দ।


অপহৃত জেলেরা হলো পাথরঘাটা উপজেলার সদর ইউনিয়নের কদম আলী খানের ছেলে নেছর খান, তাফালবাড়িয়া গ্রামের নুর মোহাম্মদের ছেলে জামাল হোসেন (৩২), একই গ্রামের আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে কামাল হোসেন (৩২), এবং শরণখোলা উপজেলার রায়েন্দা এলাকার এফবি আট ভাই ট্রলারের লোকমান হোসেন এবং এফবি শাওন ট্রলারের  জাকির হোসেন।


মৎস্যজীবীরা অভিযোগ করেন ঘটনা শুরু হয়েছে গত মঙ্গলবার দুপুর থেকে। সে থেকে কোস্টগার্ডের বিভিন্ন স্টেশনে যোগাযোগ করলেও সমুদ্রে তাদের কোন টহল দেখা যায়নি। তারা অভিযোগ করেন পাথরঘাটা স্টেশনকে জানালে তারা বলে ঘটনা স্থল মংলা স্টেশনের দিকে তাদেরকে অবহিত করেন। অপরদিকে মংলা স্টেশনকে জানালে তারা তাদের ঊর্ধ্বতন ভোলা স্টেশনকে জানাতে বলে। বঙ্গোপসাগরে ডাকাতির ঘটনায় সুষ্ঠু কোন সমাধান না পেয়ে এ নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়েছে জেলেরা। জেলেদের দাবি যদি বঙ্গোপসাগরে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো জাহাজ অথবা হেলিকপ্টার ঘটনার পরে টহল দিত তাহলে ৫ জন জেলে অপহরণের ঘটনা ঘটত না। জেলেরা বলছেন সাগরের অবস্থান করে সদস্যরা তাদের তাণ্ডব চালিয়ে যাচ্ছে।


উপস্থিত জেলেরা বলেন, গত পাঁচ দিনে ১৫টি মাছ ধরার ট্রলারে হামলা করেছে ডাকাত দল। এ সময় ৫ জেলেকে অপহরণ করে ১৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেছে দস্যু বাহিনী। রোববার পর্যন্ত দিনে-রাতে সমানতালে সাগরে ডাকাতি চললেও কোস্টগার্ডসহ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর তেমন তৎপরতা দেখছে না জেলেরা। এমনকি আমাদের জলসীমায় ভারতীয় জেলেরা মাছ শিকার করে নিয়ে গেলেও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না প্রশাসন।


জরুরি সভায় উপস্থিত দক্ষিণ স্টেশন পাথরঘাটা কোস্টগার্ড কোন্টিজেন্টাল কমান্ডার আলমগীর হোসেনের কাছে মৎস্যজীবীরা জানতে চেয়েছেন গত পাঁচ দিনে বঙ্গোপসাগর এলাকায় ডাকাতির ঘটনায় তারা কি কি পদক্ষেপ নিয়েছেন। তবে এর কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি কন্টিনেন্টাল কমান্ডার। তবে কন্টিনেন্টাল কমান্ডার আলমগীর হোসেন জানান, স্পিডবোট ছাড়া তাদের কোনো বাহন নেই। গভীর সমুদ্রে স্পিডবোট নিয়ে যাওয়া তাদের পক্ষে সম্ভব নয়।


জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী জানান, বর্তমান পুলিশ প্রধান যখন র্যাবের প্রধান ছিলেন তখন তিনি দায়িত্ব নিয়ে সুন্দরবনে বেশ কয়েকবার অভিযান চালিয়ে জলদস্যু বাহিনী ধ্বংস করে দিয়েছিলেন। কিন্তু এরপর থেকে আর কোনো অভিযান লক্ষ করা যায়নি। তবে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পাথরঘাটা সার্কেল তোফায়েল আহমেদ সরকার জানান, পুলিশ প্রধান বেনজির আহমেদের নির্দেশেই তারা এই জরুরি বৈঠক ডেকেছে মৎস্যজীবীদের সাথে। তিনি সার্বক্ষণিক আমাদের কাছ থেকে তথ্য নিচ্ছেন।


পাথরঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবুল বাশারের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন, বরগুনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পাথরঘাটা সার্কেল তোফায়েল আহমেদ সরকার, কোস্টগার্ডের পাথরঘাটা স্টেশনের কন্টিজেন্ট কমান্ডার আলমগীর হোসেন, বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী, পাথরঘাটা বিএফডিসি আড়তদার মালিক সমিতির সভাপতি জাহাঙ্গীর হোসেন জমাদ্দার, জেলা মৎস্যজীবী ফিশিং ট্রলার শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আব্দুল মন্নান মাঝি, পাথরঘাটা বিএফডিসি ঘাট শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ফারুক আকন, জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাসুম আকন, পাথরঘাটা বিএফডিসি আড়তদার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এনামুল হোসাইন, জেলা মৎস্যজীবী ফিশিং ট্রলার শ্রমিক ইউনিয়নের দুলাল হোসেন, পাথরঘাটা বিএফডিসি ঘাট শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জামাল হোসেন, ট্রলার মালিক আলম মোল্লা, নূরে আলম, সেলিম হাওলাদার প্রমূখ।


তোফায়েল হোসেন সরকার জানান মালিক সমিতি ও জেলেদের কাছ থেকে বিভিন্ন তথ্য নিয়েছি। তাদের অনেক অভিযোগ রয়েছে যা উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো হবে। জলদস্যু দমনে পুলিশ জেলেদের পাশে থেকে অগ্রনী ভূমিকা পালন করবে বলে জানান তিনি।


র‌্যাব-৮, কোম্পানী লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম জানান, ইতিপূর্বে র‌্যাবের অভিযানের মাধ্যমে বঙ্গোপসাগরে জলদস্যুর মুক্ত হয়েছে। আবারো সেই জলদস্যুদের মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার অভিযোগ রয়েছে। আমরা ইতিমধ্যে জলদস্যু দমনে কার্যক্রম শুরু করেছি।


এ বিষয়ে কোস্টগার্ড ভোলা জনের অপারেশন অফিসার লেফটেন্যান্ট সাফকাত এর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও ফোন রিসিভ করেনি

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)