প্রেস কাউন্সিল এবং গণমাধ্যম

এ এস এম জসিম
এ এস এম জসিম, বার্তা সম্পাদক
প্রকাশিত: ০৭:১৪ পিএম, ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০১৮ | আপডেট: ০১:৪৩ পিএম, ২৫ ফেব্রুয়ারী ২০১৮

---পুরোনো কথা বারবার নতুন করে বলতে ভালো না লাগলেও কখনও কখনও বলতে হয়। কথায় বলে, ‘একটি বহুতল ভবন তৈরি করতে হলে ভিত মজবুত থাকতে হয়’, তেমনি একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রকে টেকসই বা মজবুত হতে হলে আগে গণতন্ত্রের মূলমন্ত্র বা ভিত মজবুত করতে হবে অর্থাৎ গণতন্ত্রের মূলমন্ত্র বা গণতন্ত্র বলতে যা বোঝায়, সেটি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। তা হলেই একটি রাষ্ট্র সত্যিকার অর্থে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত হতে বাধ্য। আর সেই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র যে কয়টি খুঁটির ওপর দাঁড়িয়ে থাকে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে গণমাধ্যম।

অধিকাংশের না হলেও কিছুসংখ্যক মানুষের মাঝে গণমাধ্যম কী, এমন প্রশ্ন আসে। সংবাদপত্র, টেলিভিশন বা ইলেকট্রনিক মাধ্যম, রেডিও, অনলাইনে যা প্রকাশ বা প্রচার পায়, তা-ই গণমাধ্যম। এক কথায়, গণমানুষের কথা যে মাধ্যমে প্রকাশ পায়, সেটি হচ্ছে ‘গণমাধ্যম’। গণমাধ্যম (গধংং সবফরধ) হচ্ছে সংগৃহীত সবধরনের মাধ্যম, যা প্রযুক্তিগতভাবে গণযোগাযোগ কার্যক্রমে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। সম্প্রচার মাধ্যম, যা ইলেকট্রনিক মিডিয়া নামে পরিচিত, বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতির সাহায্যে তাদের তথ্য প্রেরণ করে। টেলিভিশন, চলচ্চিত্র, রেডিও বা বেতার, সিডি, ডিভিডি এবং অন্যান্য সুবিধাজনক ছোট ও সহায়ক যন্ত্রপাতি যেমনÑ ক্যামেরা বা ভিডিওচিত্রের সাহায্যে ধারণ করা হয়। পাশাপাশি মুদ্রিত মাধ্যম হিসেবে সংবাদপত্র, সাময়িকী, ব্রুশিয়ার, নিউজলেটার, বই, লিফলেট, পাম্পলেটে বাহ্য বিষয়বস্তু তুলে ধরা হয়। এতে ফটোগ্রাফি বা স্থিরচিত্রও দৃশ্যমান উপস্থাপনায় সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

সংবাদপত্র, টেলিভিশন বা ইলেকট্রনিক মিডিয়া, রেডিও অনলাইনের সঙ্গে পরিচিত হলেও গণমাধ্যমের সঙ্গে অনেকেই পরিচিত নন। আলাদা আলাদাভাবে শব্দগুলো ব্যবহার না করে এক কথায় আমরা ‘গণমাধ্যম’ ব্যবহার করে থাকি বা করা হয়। আর সেই গণমাধ্যম, সাংবাদিক বা গণমাধ্যমকর্মীদের (সাংবাদিকরা) বলা হয়ে থাকে ‘চতুর্থ রাষ্ট্র; জাতির বিবেক, জাতির আয়না, দর্পণ ইত্যাদি।’ আর এ সংবাদিকরাই সংবাদপত্র বা কোনো গণমাধ্যমের কর্মী হিসেবে কাজ করেন। একজন সংবাদকর্মী থেকে একজন সাংবাদিক; সংবাদপত্র (গণমাধ্যম) হচ্ছে সমাজ ও রাষ্ট্রের দর্পণ। সংবাদপত্র থেকে জাতি তথা রাষ্ট্র উপকৃতই হয়। সংবাদপত্র যেমন রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, তার অবাধ বিচরণ ও স্বাধীনতাও যেমন থাকা দরকার, দায়িত্বশীলতাও রয়েছে। সংবাদপত্র নৈতিকতার চর্চা করে। বিবেকের শাসন করে। সমাজ তথা রাষ্ট্রকে পরিবর্তন করতে পারে। ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রের কোথায় কীভাবে নৈতিকতার স্খলন হচ্ছে, সেটি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় সংবাদপত্র। এর পাশাপাশি গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়েও বহুকাল থেকে আলোচনা-সমালোচনা চলছে।

গণমাধ্যম কর্মীদের বা সাংবাদিকদের সংগঠিত করার জন্য বিভিন্ন সংগঠন রয়েছে প্রেসক্লাব, সাংবাদিক ইউনিয়ন, রিপোর্টার্স ইউনিটিসহ বিভিন্ন নামে। গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশিক্ষণের জন্য রয়েছে ‘প্রেস ইনস্টিটিউট’ নামে সরকারের একটি প্রতিষ্ঠন। এর পাশাপাশি গণমাধ্যম কর্মী বা গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আনার জন্য ‘প্রেস কাউন্সিল’ নামে আরও একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যদি মনে করে তাদের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রচার বা প্রকাশিত হয়েছে, তারা সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যম বা গণমাধ্যম কর্মীদের বিরুদ্ধে ‘প্রেস কাউন্সিল’-এ অভিযোগ করতে পারেন এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আইন বা বিধিও রয়েছে। সাংবাদিকরা যদি তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কোনো ধরনের নির্যাতন বা হয়রানির শিকার হন, তাহলেও তারা প্রেস কাউন্সিলে অভিযোগ করতে পারবেন।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষা ও মান উন্নয়নের উদ্দেশ্যে ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল আইন প্রণয়ন করেন এবং ১৪ ফেব্রুয়ারি আইনটি গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়। বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল গেজেট প্রকাশের দিনটিকে ‘বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল দিবস’ হিসেবে পালন করে থাকে। ২০১৭ সাল থেকে ১৪ ফেব্রুয়ারি ‘বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল দিবস’ হিসেবে পালন শুরু করে। সাংবাদিকরা সবসময় দেশ ও দশের কথা প্রকাশ করেন। সমস্যা-সম্ভাবনা, দুর্নীতি-অনিয়ম গণমাধ্যমের মাধ্যমে দেশ ও জাতির কাছে তুলে ধরেন। কিন্তু সাংবাদিকদের নিয়ে গণমাধ্যমে তেমন কোনো সংবাদ প্রকাশ হতে দেখা যায় না। ২০১৭ সালে এসে ১৪ ফেব্রুয়ারি ‘বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল দিবস’ পালন শুরু করে, আর ৩ মে ‘বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস’ নিয়ে নামমাত্র লেখালেখি হয়। কিন্তু সেটিও আশানুরূপ নয়। আমি মনে করি, সারা বছরই সাংবাদিকরা লেখেন জাতির স্বার্থে। অন্তত বছরের এ দুটি দিন শুধু সাংবাদিকদের জন্য উন্মুক্ত করা হোক এবং জেলা-উপজেলায় না হলেও কেন্দ্রীয়ভাবে সাংবাদিকদের মহাসমাবেশ ঘটানো হোক। যেটি হতে পারে সাংবাদিকদের মহামিলন এবং একে অপরের প্রতি আত্মার সম্পর্কের একটি অধ্যায়। এক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখতে পারেন সম্পাদক, গণমাধ্যমের মালিক পক্ষ প্রেস কাউন্সিল বা প্রেস ইনস্টিটিউট।
আগেই বলেছি, গণমাধ্যম দেশের গণতন্ত্রের খুঁটির অন্যতম একটি। ভবনের প্রয়োজনীয় একটি খুঁটি না থাকলে যেমন ভবনটি নড়বড়ে হওয়ার পর স্থায়িত্ব থাকে না, ঠিক তেমনি একটি দেশে ‘গণমাধ্যম’ নামক খুঁটি যেমন থাকার প্রয়োজন রয়েছে, তেমনি এ খুঁটির দায়িত্বও রয়েছে অনেক। দায়িত্বের পাশাপাশি বাংলাদেশ সংবিধানের ৩৯ ধারায় সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছেÑ ‘চিন্তা এবং বিবেকের স্বাধীনতা দান করা হইল। রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, বিদেশি রাষ্ট্রসমূহের সহিত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, জনশৃঙ্খলা, শালীনতা ও নৈতিকতার স্বার্থে কিংবা আদালত-অবমাননা, মানহানি বা অপরাধ-সংঘটনে প্ররোচনা সম্পর্কে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধানিষেধ-সাপেক্ষে প্রত্যেক নাগরিকের বাক্ ও ভাব প্রকাশের স্বাধীনতার অধিকারের এবং সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দান করা হইল।’

সংবিধানের ২ উপধারাটি বিশ্লেষণে দেখা যায়, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হলেও এখানেও কিছু শর্ত মানতে হবে। সেগুলো হলো এমন কিছু সংবাদ মাধ্যমে আসতে পারবে না, যার জন্য রাষ্ট্রের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেয়। এমন কিছু প্রকাশ করা যাবে না, যার জন্য বিদেশি রাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক নষ্ট হতে পারে। জনশৃঙ্খলা বিঘিœত হয়, এমন তথ্য প্রকাশ করা যাবে না। অশালীন এবং অনৈতিক কিছু সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ করা যাবে না। সবসময় আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে এবং এমন কিছু প্রকাশ করা যাবে না, যার জন্য কেউ অপরাধ করার জন্য প্ররোচিত হতে পারে। এসব শর্ত মেনে নিয়েই গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়ে থাকে। এসব শর্তের লঙ্ঘন হলে আদালতের মাধ্যমে প্রতিকার পাওয়া সম্ভব। বাংলাদেশ সংবিধানের এ ধারাটি সংবাদপত্রের স্বাধীনতার পেছনে গভীর তাৎপর্য বহন করে। কারণ বাংলাদেশে এখন যতটুকু স্বাধীনতা বিদ্যমান, তার প্রায় পুরোটাই সম্ভব হয়েছে সংবিধানে এ ধারাটি যোগ করে। সংবিধানের মৌলিক অধিকারের ক্ষেত্রে যেমন মতপ্রকাশের স্বাধীনতার কথা বলা হয়েছে, তেমনি গোপনীয়তার অধিকারের কথাও বলা হয়েছে। মত প্রকাশ করতে গিয়ে এমন কিছু করা উচিত নয়, যার জন্য একজন ব্যক্তির স্বাধীনতা ব্যাহত হয়। জানার অধিকার এবং গোপনীয়তার অধিকারের মধ্যে সবসময় একটি ভারসাম্য রেখে চলতে হয়।

একটি দাবিদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা আছে কি না এ প্রশ্নে সবার মনে বাসা বেঁধে আছে। সংবাদপত্র বা গণমাধ্যম একটি পণ্য। তা প্রকাশ বা পরিচালনা করতে পুঁজির প্রয়োজন। এতে যেমন লাভ আছে, তেমনি লোকসানের ঘানিও টানতে হয়। সংবাদপত্রকে ভালো লাগলে মানুষ তা টাকা দিয়ে কেনে। ভালো না লাগলে কেনে না। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক যুগে বাংলাদেশের মানুষ দেশের স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম শুরু করার আগেই সংবাদপত্রের স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করেছে। দেশের অগ্রযাত্রার জন্য সংবাদপত্র যেমন প্রয়োজন, তেমনি সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতাও প্রয়োজন। এর সঙ্গে সাংবাদিকের স্বাধীনতাও জরুরি। একজন স্বাধীনচেতা সাংবাদিক, যিনি কোনো পক্ষভুক্ত নন, তার জন্য প্রয়োজন সেরকম একটি সংবাদপত্র, যেখানে পেশাদারিত্ব চলবে। মালিকের হস্তক্ষেপ থাকবে না। আজকাল সংবাদপত্রের মালিকরাই সম্পাদক হচ্ছেন। সারাজীবন পেশায় কাটিয়ে দিয়ে তিনি একজন পুঁজির মালিকের অধীন হয়ে গেলেন। কিন্তু তাতে কি স্বাধীন সাংবাদিকতা হবে? এভাবেই স্বাধীন সাংবাদিকতার পথ ক্রমে রুদ্ধ হয়ে আসছে। এখানেও যেমন প্রকৃত সাংবাদিকদের স্বাধীনতা খর্ব করা হচ্ছে, তেমনি রাজনৈতিকভাবে তো সাংবাদিকতা ঝুঁকির মধ্যে থাকে সবসময়। রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় থাকলে সাংবাদিকদের বিপক্ষে অবস্থান নেয়, আর বিরোধী দলে থাকলে সাংবাদিকদের পক্ষে অবস্থান নেয়। গণমাধ্যম বা সাংবাদিকদের স্বাধীনতা দিচ্ছে বলে রাজনীতিকরা মুখে খই ফোটাচ্ছেন; কিন্তু কতটুকু গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রয়েছে, সেটি প্রশ্নবিদ্ধ।

এ তো গেল গণমাধ্যমের দায়িত্ব, দায়িত্বশীলতা, স্বাধীনতা ইত্যাদি। কিন্তু গণমাধ্যমের দেখভাল করার জন্য দায়িত্বশীল একটি প্রতিষ্ঠান হচ্ছে ‘প্রেস কাউন্সিল’। প্রশ্নও আসতে পারে, ‘প্রেস কাউন্সিল’ গণমাধ্যম বা গণমাধ্যম কর্মীদের ব্যাপারে কতটুকু দায়িত্ব পালন করছে বা করেছে? যাক এ প্রশ্নের উত্তরটি আপাতত খোঁজার ইচ্ছা নেই। তবে গণমাধ্যম কর্মী হিসেবে গণমাধ্যম কর্মীদের অধিকার চাইতে পারি প্রেস কাউন্সিলের কাছে। প্রেস কাউন্সিল আর গণমাধ্যম বা গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে সম্পর্কটা থাকা উচিত ভালো। যেখানে একে অপরের সঙ্গে সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক এবং বিপদে-আপদে একে অপরের পাশে থাকবে। প্রেস কাউন্সিল অ্যাক্ট-১৯৭৪ এর ১১ নম্বর ধারায় কাউন্সিলের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘প্রেসের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা এবং সংবাদপত্র ও সংবাদ সংস্থাগুলোর মান সংরক্ষণ ও উন্নয়ন করা।’ কার্যাবলিতে বলা হয়েছে, সাংবাদিকতা পেশায় নিয়োজিত ব্যক্তিদের যথাযথ শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের জন্য সুযোগসুবিধা প্রদান করা। সংবাদপত্র ও সংবাদ সংস্থাগুলোর স্বাধীনতা সংরক্ষণে সহায়তা করা; সংবাদপত্র ও সংবাদ সংস্থা এবং সাংবাদিকদের রুচি বা পছন্দের উচ্চমান সংরক্ষণ নিশ্চিত করা; প্রেস কাউন্সিল বিগত বছরে এমন কাজ কতটা করেছে? আমার মনে হয় বিগত বছরে প্রেস কাউন্সিল তাদের আইন অনুযায়ী শতভাগ কাজ করতে না পারলেও আশানুরূপ কাজ করেছে।

গণমাধ্যমে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করার যেমন দায়িত্ব রয়েছে, তেমনি দায়িত্ব রয়েছে দেশের প্রতিও। আর সেই দায়িত্ববোধের ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে গণমাধ্যমের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে প্রেস কাউন্সিলকে শক্তিশালী এবং ঢেলে সাজানোর বিকল্প নেই। এরই মধ্যে সারা দেশের সাংবাদিকদের তালিকা প্রণয়ন ও সংরক্ষণের কাজ শুরু করেছে বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল, এটি প্রশংসনীয়। আইনের পাশাপাশি সাংবাদিক এবং গণমাধ্যমকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্যও উদ্যোগী হয়ে দায়িত্ব নেওয়া উচিত প্রেস কাউন্সিলকে। অনেক বছর পর হলেও প্রেস কাউন্সিল প্রতি বছর যে ‘বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল দিবস’ পালন করছে, এজন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। পাশাপাশি ‘প্রেস কাউন্সিল দিবস’-এ ৪ ক্যাটাগরিতে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে সাংবাদিকদের পুরস্কৃত করছে। প্রতি বছর দিবস আর দিবসের মাধ্যমে সাংবাদিকদের পুরস্কৃত করা সত্যিকার অর্থে যেমন প্রশংসনীয়, তেমনই সাংবাদিকদের কাজের গতি বাড়িয়ে দেওয়া এবং দায়িত্বশীল হওয়ার একটি সুগম পথ; পাশাপাশি প্রেস কাউন্সিল এবং সাংবাদিক দুটো একই প্রাণের দুটি ডানা। আমরা মনে করি, একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের প্রতি গণমাধ্যমের দায়িত্ব আর প্রেস কাউন্সিলের দায়িত্ব হওয়া উচিত পরিপূরক। সাংবাদিকদের প্রতি প্রেস কাউন্সিলের ভূমিকা থাকাটাও উচিত প্রশংসনীয় পর্যায়। ভবিষ্যতে সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের অভিভাবক হিসেবে প্রেস কাউন্সিলকে আরও শক্তিশালী ও কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে।

পরিশেষে বলতে চাই, স্বাধীন বাংলাদেশটির সুনাম রক্ষা করা যেমন নাগরিক হিসেবে সবার দায়িত্ব রয়েছে, তেমনি গণমাধ্যম, প্রেস কাউন্সিল বা প্রেস ইনস্টিটিউটেরও দায়িত্ব রয়েছে। তাই গণমাধ্যম, প্রেস কাউন্সিল এবং প্রেস ইনস্টিটিউটের সম্মিলিত প্রচেষ্টা এবং উদ্যোগে একটি টেকসই বাংলাদেশ হিসেবে বিশ্বের কাছে পরিচিত করা কোনো ব্যাপারই নয়। তাই এসব প্রতিষ্ঠান তাদের সুনাম রক্ষা এবং দেশের সুনাম রক্ষার জন্য উদ্যোগী হয়ে কাজ করবেনÑ এটাই কামনা করছি।

শফিকুল ইসলাম খোকন
সাংবাদিক, কলামিস্ট ও স্থানীয় সরকার বিষয়ে গবেষক
msi.khokonp@gmail.com

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)