বরগুনা সহ দেশের অনেক জেলায় ক্ষুব্ধ তৃণমূল, মানছে না কেন্দ্রের নির্দেশ

ডেস্ক নিউজ
ডেস্ক নিউজ,
প্রকাশিত: ১০:৪২ পিএম, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮

সংবাদ সম্মেলন, নির্বাচন
নানা অভিযোগে দলীয় সংসদ সদস্যদের ওপর ক্ষুব্ধ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাকর্মীরা। টানা ১০ বছর ক্ষমতায় থাকলেও সংসদ সদস্যদের কাছ থেকে সহযোগিতার বদলে বৈষম্যের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ তাদের। স্থানীয় এমপিদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ এনে করছেন সংবাদ সম্মেলন। এমনকী এলাকায় সংসদ সদস্যদের অবাঞ্ছিতও ঘোষণা করা হচ্ছে।

যদিও প্রকাশ্যে এভাবে ক্ষোভ প্রচার না করতে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশনা ছিল। কিন্তু তা মানছেন না তৃণমূল নেতাকর্মীরা।

সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে অথবা দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশীদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে বিষদগার না করার নির্দেশ দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। কোনো সংসদ সদস্য বা দলীয় নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে তা গঠনতন্ত্র অনুযায়ী লিখিত আকারে কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে পাঠাতে বলেন তিনি।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা জানান, নির্বাচন সামনে রেখে মনোনয়ন প্রতিযোগিতা থেকে এসব অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ আসছে। মনোনয়নে প্রভাব ফেলতে এ ধরনের অভিযোগ আনা হচ্ছে।

দলটির একাধিক নেতার দেয়া তথ্য অনুযায়ী, বরগুনা-১ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর বিরুদ্ধে ২৪ দফা অভিযোগ এনে নিজ এলাকায় তাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়। গত ৪ সেপ্টেম্বর সংবাদ সম্মেলন করে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির এমন অভিযোগ আনেন।

পরের দিন (৫ সেপ্টেম্বর) নানা অনিয়ম-দুর্নীতি এবং জামায়াতে ইসলামীকে প্রতিষ্ঠা করার অভিযোগ এনে দিনাজপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য মনোরঞ্জন শীল গোপালকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।

গত ২৩ সেপ্টেম্বর রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে যশোর-৪ আসনের সংসদ সদস্য রনজিৎ কুমার রায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা।

গত বছরের ডিসেম্বরে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে রাজশাহী-৫ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল ওয়াদুদ দারাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের একাংশ।

আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, তিন সংসদ সদস্যকে অবাঞ্ছিত ঘোষণার ঘটনায় দলের কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে সম্প্রতি স্থানীয় নেতাদের এবং ওই সংসদ সদস্যদের শোকজ নোটিশ পাঠানো হয়েছে। দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের স্বাক্ষরিত ওই নোটিশে ১৫ দিনের মধ্যে তাদের কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে।

এদিকে চলতি বছরের মে মাসে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য, সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী ও শেরপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য মতিয়া চৌধুরীকে শেরপুর থেকে প্রত্যাহারের সুপারিশ করেন জেলা আওয়ামী লীগ নেতারা।

অপরদিকে বরিশাল-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ দেবনাথের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ এনে গত ১০ সেপ্টেম্বর ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।

গত বছরের জানুয়ারিতে বরগুনা-২ আসনের সংসদ সদস্য শওকত হাচানুর রহমান রিমনের বিরুদ্ধে জামায়াতপ্রীতি এবং স্থানীয় নেতাকর্মীদের নামে হামলা-মামলা দিয়ে হয়রানির অভিযোগ আনা হয়। তিনি ‘যুদ্ধাপরাধী পরিবারের সন্তান’ বলেও ঢাকায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করা হয়।

‘পাথরঘাটা-বামনা-বেতাগীর নির্যাতিত মুক্তিযুদ্ধপ্রেমী মানুষদের পক্ষে’ জেলার বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা ওই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। সংবাদ সম্মেলনে এমপি শওকত হাচানুর রহমানের বৈধ ও অবৈধ উপায়ে অর্জিত সম্পত্তির অনুসন্ধান, অবৈধ সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত এবং তাকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কারের দাবি জানানো হয়।

এসব বিষয়ে কথা হয় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কর্নেল (অব.) ফারুক খানের সঙ্গে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘এ বিষয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক স্পষ্টভাবে বলেছেন যে, দলের বিরুদ্ধে যাদের কর্মকাণ্ড, তাদের বিরুদ্ধে দল অত্যন্ত কঠোর। কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে সেটা দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী করতে হবে। অভিযোগের যাচাই-বাছাই করে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, ‘নির্বাচন সামনে হওয়ায় মনোনয়নপ্রত্যাশী ও মনোনয়নবিরোধীরা পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করছেন। অভিযোগকারীরা যে অভিযোগ করছেন এবং যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠছে- বিষয়গুলোর সত্যতা যাচাইয়ের তো প্রশ্ন আছে।’

‘এসব অভিযোগ মনোনয়নপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলবে’ উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘মনোনয়ন দেয়ার ক্ষেত্রে উভয়পক্ষের অভিযোগ অবশ্যই যাচাই-বাছাই হবে। এটা আমাদের দলের একটা বিউটি। নেতৃত্ব বিকাশের সুযোগ থেকে এই প্রতিযোগিতা। তবে এটা বেশি বেড়ে গেলে দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)