মায়ের কাছে খুনীদের পরিচয় জানিয়েছিলেন সাংবাদিক নদী

ডেস্ক নিউজ
ডেস্ক নিউজ,
প্রকাশিত: ০৫:১১ পিএম, ২৯ আগস্ট ২০১৮

সাংবাদিক নদী
বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ‘আনন্দ টিভি’র পাবনা প্রতিনিধি এবং স্থানীয় অনলাইন পোর্টাল ‘দৈনিক জাগ্রত বাংলা’র সম্পাদক ও প্রকাশক সুবর্ণা আক্তার নদী মারা যাওয়ার আগে তার ওপর হামলাকারীদের নাম বলে গিয়েছিলেন। অজ্ঞাত দুর্বৃত্তদের হামলায় গুরুতর আহত নদীকে যখন তার মা হাসপাতালে নিচ্ছিলেন তখন মায়ের কাছেই হামলাকারীদের নাম জানিয়েছিলেন তিনি।
সুবর্ণা আক্তার নদীর মা মর্জিনা বেগম সাংবাদিকদের এসব কথা জানিয়ে বলেন, ‘আমি আমার মেয়েকে হাসপাতালে নিয়ে যাই। হাসপাতালে নেওয়ার পথে সে আমাকে তার ওপর হামলাকারীদের নাম বলে। সে বলে আবুলের ছেলে রাজীব, সহকারী মিলন সহ কয়েকজন আমাকে কুপিয়েছে। আমি তাদের চিনতে পেরেছি। ’ এ সময় রাজীবের ফাঁসির দাবি জানিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন নদীর মা।

মঙ্গলবার (২৮ আগস্ট) রাত ১০টার দিকে জেলার রাধানগরে নিজের বাসার সামনে কুপিয়ে হত্যা করা হয় নদীকে। তিনি আনন্দ টিভির পাবনা প্রতিনিধি এবং স্থানীয় অনলাইন পোর্টাল ‘দৈনিক জাগ্রত বাংলা’র সম্পাদক ও প্রকাশক। তার ৫/৬ বছরের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, নদীর সাবেক স্বামীর নাম রাজিব হোসেন। তিনি পাবনার একটি ওষুধ কোম্পানি এবং একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতালের মালিক ব্যবসায়ী আবুল হোসেনের ছেলে। রাজিবের বিরুদ্ধে একটি যৌতুক মামলা করেছিলেন সুবর্ণা আক্তার নদী। মামলা নম্বর-সিআর ২৯৭/১৭ (পাবনা)। মঙ্গলবার আদালতে নদীর বড় বোনের স্বাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য ছিল। বিষয়টি নিয়ে নদী ও তার বড় বোন চম্পা বেগমের সঙ্গে রাজীব হোসেনের আদালত প্রাঙ্গণেই বাকবিতণ্ডা হয়।

এরপর নদী তার অফিসে চলে যান এবং সেখানেই রাত পর্যন্ত কাজ করেন। কাজ শেষে রাতে বাড়ির গেট দিয়ে ঢোকা মাত্রই ৩/৪ জন দুর্বৃত্ত তাকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে ফেলে রেখে চলে যায়। স্থানীয়দের সহযোগিতায় নদীকে উদ্ধার করে তার মা পাবনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

নদীর বড় বোন চম্পা বেগম জানান, মঙ্গলবার সকালে বোনের যৌতুক মামলার স্বাক্ষ্যগ্রহণের দিন নির্ধারিত ছিল। সাক্ষ্যে তিনি আসামি রাজীবের বিরুদ্ধে বক্তব্য দেওয়ায় রাজীব ও তার সহযোগিরা তাদের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে যায়। এক পর্যায়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। এসময় তারা তখন সেখান থেকে বাড়িতে চলে যান। এরপর রাতেই তার বোনোর ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় নদীর বাড়ির কেয়ারটেকার ও তার সাবেক শ্বশুর আবুল হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।

বাড়ির কেয়ারটেকার ইমরান হোসেন’র ছোট ভাই মেহেদী বলেন, ‘আমার ভাই এই বাড়ির কেয়ারটেকার। ঘটনার সময় আমার ভাই বাড়ি ছিলেন না। পরে খবর পেয়ে ভয়ে বাড়ি ফেরেন নাই। রাত আড়াইটার দিকে বাড়ি আসলে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে এবং সঙ্গে তার আরও কয়েকজন বন্ধুকে ধরেছে।’

অন্যদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিমলা ডায়াগনিস্টিক সেন্টার অ্যান্ড হাসাতালের একজন কর্মচারী জানান, রাতেই তাদের মালিক আবুল হোসেনকে আটক করে থানায় নিয়ে গেছে পুলিশ।

পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গৌতম কুমার বিশ্বাস জানান, পাবনা পৌর সদরের রাধানগর মহল্লায় আদর্শ গার্লস হাইস্কুলের সামনে বাসার কলিং বেল টিপে কয়েকজন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি সুবর্ণার গেট খোলার সঙ্গে সঙ্গে তাকে অতর্কিত এলোপাথাড়ি কুপিয়ে ফেলে পালিয়ে যায়। পরে তাকে উদ্ধার করে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওবাইদুল হক বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, রাতে কয়েকজন সন্ত্রাসী তার ওপর হামলা চালায়। তারা সুবর্ণার হাতে ও মাথায় এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করে। স্থানীয়রা উদ্ধার করে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে পুলিশ।

সুবর্ণার শেষ ক্রাইম রিপোর্টে যা ছিল: ফেসবুকে সুবর্ণার উপস্থিতি ছিল। তাতে যেসব তথ্য পাওয়া গেছে তাতে দেখা যাচ্ছে, ফেসবুক নিয়ে সমস্যায় ছিলেন তিনি। তবে কী ধরনের সমস্যায় তিনি ছিলেন তার কিছু তিনি বিস্তারিত জানাননি।

গত ১৫ জুলাই একটি সংবাদের লিংক শেয়ার করেন সুবর্ণা; যে পোস্টটি তার শেয়ার করা সর্বশেষ ক্রাইম রিপোর্ট। ১৫ জুলাই তার ওই পত্রিকায় ‘পাবনার ভাঙ্গুড়ায় বিয়ের প্রলোভনে অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রীকে ধর্ষণ’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি সংবাদের লিংকটি তিনি ফেসবুকে শেয়ার করেন। ওই সংবাদে স্থানীয় ভাঙ্গুড়া প্রতিনিধির বরাত দিয়ে ভাঙ্গুড়ায় এক যুবক বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে (১৪) বছরের এক অষ্টম শ্রেনির ছাত্রীকে রাতভর ধর্ষণ করেছে; এমন অভিযোগের খবর প্রকাশ করা হয়ে। খবরে উপজেলার দিলপাশার ইউনিয়নের পাঁচ বেতুয়ান গ্রামের এক কিশোরীকে পার্শ্ববর্তী বেতুয়ান ফকিরপাড়া গ্রামের ঘাট মাঝি আবু সাম এর ছেলে সুজনের (২০) প্রেমের সম্পর্কের জেরে এ ঘটনা ঘটেছে বলে উল্লেখ করা হয়।

সুবর্ণার শেয়ার করা ওই খবরে বলা হয়েছে, ‘প্রেমিক সুজন ফোন করে প্রেমিকা কিশোরীকে বিয়ে করবে বলে জানায় এবং কিশোরীকে বাড়ি থেকে টাকা আনতে বলে। প্রেমিকের কথা মতো কিশোরী বাড়িতে থাকা ৩০ হাজার টাকা নিয়ে প্রেমিকের কাছে যায়। এসময় প্রেমিক তার বন্ধু নাঈম ও শাহাবুদ্দিনের সহযোগিতায় পার্শ্ববর্তী উল্লাপাড়া উপজেলার বাঘমাড়া বেতকান্দী গ্রামে তার খালার বাড়িতে যায়। এরপর লম্পট প্রেমিক তার খালার বাড়িতে প্রেমিকা কিশোরীকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে সারারাত ধর্ষণ করে। পরদিন সকালে প্রেমিক কাজী ডেকে আনার কথা বলে কিশোরী প্রেমিকার কাছে থাকা ওই টাকা নিয়ে উধাও হয়ে যায়। পরে প্রেমিকের খালার পরিবার কিশোরীকে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। এটিই ছিল সুবর্ণার সর্বশেষ ক্রাইম রিপোর্ট, যা তার ফেসবুকে শেয়ার করা হয়েছিল।

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)