শুভ সন্ধ্যায় জোছনা উৎসব আগামী কাল

ডেস্ক নিউজ
ডেস্ক নিউজ,
প্রকাশিত: ০৫:০৬ পিএম, ২২ নভেম্বর ২০১৮

শুভ সন্ধ্যা সমুদ্র সৈকতে সন্ধার দৃশ্য‘এই মোম জোছনায় অঙ্গ ভিজিয়ে, এসো না গল্প করি’ গানের সুরে সুরে জলতরীতে ভেসে ভেসে জোছনা উৎসবে মাতবে বরগুনাসহ সারা দেশের হাজারো জোছনাপ্রেমী মানুষ।

শুক্রবার বরগুনার শুভ সন্ধ্যা সি-বিচে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দেশের সর্ববৃহৎ জোছনা উৎসব। এ উৎসব ঘিরে ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে বরগুনা জেলা প্রশাসন।

দেশের সর্ব দক্ষিণের উপকূলীয় জেলা বরগুনার খড়স্রোতা পায়রা, বিষখালী ও বলেশ্বর নদীর মোহনায় নবগঠিত তালতলী উপজেলার নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের স্নিগ্ধ বেলাভূমি- ‘শুভ সন্ধ্যা’র বিস্তীর্ণ সৈকতে চতুর্থবারের মতো এ উৎসব অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।

একদিকে দীর্ঘ ঝাউবন, আরেকদিকে তিন তিনটি নদীর বিশাল জলমোহনা। সব মিলিয়ে নদ-নদী আর বন-বনানীর এক অপরূপ সমাহার তালতলী উপজেলার শুভ সন্ধ্যার চর!

শুক্রবার ভরা পূর্ণিমায় এখানেই জলজোছনায় একাকার হবে জোছনাবিলাসী হাজারো মানুষ। এ উৎসব ঘিরে ইতোমধ্যেই শুভ সন্ধ্যা সৈকতে বাহারি পণ্যের পসরা সাজিয়ে স্টল সাজিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

পর্যটনশিল্পের অপার সম্ভাবনাময় বরগুনার নয়নাভিরাম সৌন্দর্যকে দেশ-বিদেশের পর্যটকদের কাছে তুলে ধরতে এ উৎসবে যোগ করা হয়েছে নানা উদ্যোগ-আয়োজন।

বরগুনা জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, এবারের জোছনা উৎসবে বরগুনা থেকে দুটি দোতলা লঞ্চ সংযোজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শুক্রবার দুপুর দেড়টায় বরগুনা লঞ্চঘাট থেকে লঞ্চ ছেড়ে যাবে। বরগুনার খাগদন নদী হয়ে বাইনচটকীর স্নিগ্ধ বনভূমির পাশ দিয়ে কুমিরমারা আর গোড়াপদ্মার নয়নাভিরাম বনবনানীর কোল ঘেঁষে বিকেল পাঁচটার দিকে লঞ্চ পৌঁছবে শুভসন্ধ্যার চরে। এরপর বিস্তীর্ণ সেই স্নিগ্ধ বালুচরে শেষ বিকেলের ঘোরাঘুরির পর রাতভর জোছনার গান, রাখাইন নৃত্য, বাউল সংগীত, মোহনীয় বাশি, পুঁথি এবং কবিতা আবৃত্তির সাথে সাথে জলজোছনায় অবগাহন হবে সবার।

থাকবে লোভনীয় পুরস্কারের আকর্ষণীয় লটারি। গভীর রাত পর্যন্ত জোছনাস্নাত হয়ে রাত ৩টায় আবার বরগুনার উদ্দেশে লঞ্চ ছাড়বে। ভোর ৬টা নাগাদ লঞ্চ ভিড়বে বরগুনার ঘাটে।

এবারের জোছনা উৎসবে স্থানীয় এলাকাবাসীসহ রাজধানী ঢাকা এবং দেশ-বিদেশের ২০ থেকে ৩০ হাজার পর্যটক ভিড় জমাবেন বলে ধারণা আয়োজক কমিটির। বিকেল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত দীর্ঘ সময়, নদনদীর মোহনা এবং শীতের হিম হাওয়ার কথা ভবনায় রেখে এ উৎসবে ১০ বছরের কম বয়সী শিশুদের নিয়ে আসতে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। তা ছাড়া যেহেতু দীর্ঘ সময় বালুচরে ঘোরাঘুরি করতে হবে। সেহেতু বেলাভূমিতে নিজেদের মতো করে আড্ডা জমাতে হলে ভ্রমণের আগে প্রয়োজনীয় মাদুর, বিছানার চাদর, শীতের কাপড়, বিশুদ্ধ পানি, গামছা বা তোয়ালে, টিস্যু পেপার এবং লাইট স্ন্যাক্স সাথে নিয়ে আসার জন্য আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

যারা ডাক্তারি পরামর্শে নিয়মিত ওষুধ সেবন করেন, তাদের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে দরকারি সব ওষুধ সাথে নিতে।

বিশুদ্ধ খাবার পানির পাশাপাশি নারী ও পুরুষের জন্য ভিন্ন ভিন্ন শৌচাগারের ব্যবস্থা করা হয়েছে আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে। মূল স্টেজের পেছনেই থাকছে নারীদের জন্য নির্ধারিত শৌচাগার। স্টেজ থেকে একটু দক্ষিণে ঝাউবন ঘেঁষে নির্মাণ করা হয়েছে নারী ও শিশুদের জন্য বিশ্রামাগার। থাকছে র‌্যাব ও পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিশেষ নিরাপত্তাব্যবস্থা।

চাঁদনী রাতে তিন নদীর জলমোহনায় ছোট ছোট ট্রলার ভাড়া করে দল বেঁধে ঘুরে বেড়ানোর জন্য থাকছে ভাড়ায় চালিত ট্রলারের সুব্যবস্থাও। বরগুনা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুটি নির্ধারিত হটলাইন নম্বর জানিয়ে দেওয়া হয়েছে (০১৩১৮৬৫৫৬৩৬/০১৩১৮৬৫৫৬৩৬)। এ নম্বরে যোগাযোগ করে রেজিস্ট্রেশনসহ জোছনা উৎসব-সংক্রান্ত সব তথ্য জানা যাবে। একই সাথে জোছনা উৎসবসংক্রান্ত সব তথ্য দিয়ে খোলা হয়েছে একটি ফেসবুক পেইজও। যেখানে জোছনা উৎসবসংক্রান্ত সব তথ্যসহ আকর্ষণীয় সব ডকুমেন্টারি শেয়ার করা হয়েছে।

জোছনা উৎসবের উদ্যোক্তা বরগুনার তরুণ সাংবাদিক সোহেল হাফিজ বলেন, স্থানীয় সমমনা বন্ধুদের নিয়ে যে উৎসবটি আমরা শুরু করেছিলাম, তা আজ সর্বস্তরের সাধারণ মানুষের কাছে একটি প্রিয় উৎসবে পরিণত হয়েছে। বরগুনা জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এ উৎসবটি ধীরে ধীরে দেশ-বিদেশেও ব্যাপক পরিচিতি পাবে বলে আমরা আশাবাদী।

এ বিষয়ে বরগুনা জেলা প্রশাসক ও জোছনা উৎসব আয়োজক কমিটি ২০১৮-এর আহ্বায়ক কবীর মাহমুদ জানান, বরগুনায় যোগদান করেই এখানকার প্রতিটি পর্যটন স্পট আমি ঘুরে দেখেছি। বরগুনা হলো এমন একটি জেলা, যেখান থেকে নৌপথে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত এবং বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের অভয়ারণ্যের দূরত্ব মাত্র ৫ থেকে ৭ কিলোমিটার। এ ছাড়া বরগুনায় রয়েছে, নয়নাভিরাম স্নিগ্ধ বনভূমি আশারচর, লালদিয়ারচর, হরিণঘাটার বন, টেংড়াগিরির বনভূমি এবং শুভ সন্ধ্যার বিচ পয়েন্টসহ অনেক আকর্ষণীয় বন-বনানী ও নদ-নদীর মোহনা।

এসব বনাঞ্চলে রয়েছে হরিণ, বানর, শূকরসহ শত প্রজাতির প্রাণীবৈচিত্র। বরগুনার এসব আকর্ষণীয় পর্যটন এলাকাগুলো পরিকল্পিতভাবে দেশবাসীর কাছে তুলে ধরা গেলে পর্যটনশিল্প বিকাশের সাথে সাথে এখানকার অর্থনীতিতে ব্যাপক ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে।

তিনি আরও বলেন, বরগুনার মানুষ উৎসবপ্রিয়। জোছনা উৎসবের মতো একটি উৎসবকে দেশ-বিদেশি পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় করে প্রচার করা গেলে প্রতিবছর এ উৎসব ঘিরে পর্যটকদের ভিড় বাড়বে। আর এভাবেই এগিয়ে যাবে বরগুনা। এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।(সূত্রঃ পরিবর্তন.কম)

পাথরঘাটা নিউজ/এএসএমজে/২২ নভেম্বর

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)