৩ দিন সাইকেল চালিয়ে বরগুনায় করোনা রোগী, ঘরে উঠতে দেয়নি স্ত্রী!

ডেস্ক নিউজ
ডেস্ক নিউজ,
প্রকাশিত: ০৫:৫৩ পিএম, ১৬ এপ্রিল ২০২০

ছবিঃ সংগ্রহীতকরোনাভাইরাসে আক্রান্ত এক রোগী ঢাকার সাভার থেকে সাইকেল চালিয়ে বরগুনা গিয়েও জায়গা হয়নি বাড়িতে। নিজের ঘরে উঠতে দেয়নি স্ত্রী।

পরে ওই ব্যক্তি শ্বশুরবাড়িতে আশ্রয় নেয়ায় ওই বাড়িসহ দুটি বাড়ি লকডাউন করে দিয়েছে জেলা প্রশাসন। আর ওই ব্যক্তির জায়গা হয়েছে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে আইসোলেশনে।

ওই যুবকের বাবা, স্ত্রী ও প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাভারের একটি পোশাক কারখানায় কাজ করতেন ওই যুবক। ৫ এপ্রিল তার শরীরে করোনাভাইরাসের উপসর্গ দেখা দেয়। স্বজনরা বিষয়টি জানতে পেরে তাকে ঢাকায় চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে বলেন। কিন্তু তিনি চিকিৎসকের কাছে যায়নি।

৭ এপ্রিল সাভারের স্থানীয় এক ব্যক্তির কাছ থেকে বাইসাইকেল নিয়ে বরগুনার উদ্দেশে রওয়ানা দেয়। অসুস্থ শরীরে টানা তিন দিন বাইসাইকেল চালিয়ে ১০ এপ্রিল বরগুনা সদর উপজেলায় নিজ বাড়িতে পৌঁছান ওই যুবক। কিন্তু যুবকের স্ত্রী তাকে ঘরে উঠতে দেয়নি।

ওই যুবকের প্রতিবেশী এক দম্পতি বলেন, অসুস্থ অবস্থায় তার বাড়ি আসার খবর আমরা জানতে পারি ১১ এপ্রিল বিকালে। মূলত ঢাকা থেকে অসুস্থ অবস্থায় বাড়ি ফেরার চেয়ে বেশি আলোচিত বিষয় ছিল তিন দিন ধরে সাইকেল চালিয়ে তার বরগুনায় আসার খবর।

বাড়িতে উঠতে না পেরে প্রথম দুই দিন তিনি তার শ্বশুরের ঘরে ছিলেন। বাহিরে বের হননি। পরে স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে ১২ এপ্রিল পুলিশ তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়।

বরগুনা জেনারেল হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ওই যুবকের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য বরিশালে পাঠানো হয়। ১৪ এপ্রিল সন্ধ্যায় বরগুনা জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে রিপোর্ট এসেছে। তাতে ওই যুবক করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত।

ওই যুবকের বাবা বলেন, ৭ এপ্রিল সকালে বৌমার মাধ্যমে আমার ছেলের অসুস্থ অবস্থায় বাড়ি রওয়ানা করার খবর জানতে পারি। ফোনে কল করে তাকে বাড়িতে আসতে নিষেধ করেছি। আমার কথা ছেলে শোনেনি। তিন দিন সাইকেল চালিয়ে ১০ এপ্রিল বিকালের দিকে আমার ছেলে বাড়িতে আসে।

তিনি বলেন, বৌমা আমার ছেলেকে ঘরে উঠতে দেয়নি। তাই সে শ্বশুর বাড়িতে অবস্থান নেয়। সেখানে আমার ছেলে আরও অসুস্থ হয়ে পরে। এরপর জানতে পারি, আমার ছেলের শরীরে করোনাভাইরাসের উপসর্গ দেখা দিয়েছে।

করোনায় আক্রান্ত ওই যুবকের স্ত্রী বলেন, আমি তাকে বরগুনা আসতে অনেক বার নিষেধ করেছিলাম। আমি তাকে সাভারে ডাক্তার দেখাতে বলেছি। কিন্তু আমার স্বামী কথা শোনেনি। বরগুনা আসার পরও তাকে আমি ঘরে উঠতে নিষেধ করে হাসপাতাল যেতে বলি। কিন্তু সে আমার কোনো কথাই শোনেনি। তাই তাকে আমি ঘরে উঠতে দেইনি।

বরগুনার সিভিল সার্জন বলেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ওই যুবক এখন ভাল আছে। আমাদের চিকিৎসকরা সার্বক্ষণিক তার চিকিৎসা দিচ্ছেন।

বরগুনার জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ বলেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সাইকেল চালিয়ে ওই যুবক ঢাকার সাভার থেকে বরগুনা এসেছেন, তা আমি অবগত আছি। ঢাকা থেকে এসে ওই যুবক নিজ বাড়ি থেকে বিতাড়িত হয়ে শ্বশুরবাড়িতে আশ্রয় নেয়। এজন্য তার শ্বশুরবাড়ি ও এক শ্যালকের বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে।(সূত্রঃ যুগান্তর)

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)